রাফাল দুর্নীতি প্রসঙ্গে গতকালই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, ‘চৌকিদার নিজেই বায়ুসেনার থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা চুরি করার জন্য অনিল আম্বানিকে দরজা খুলে দিয়েছেন।’ আর আজ বিরোধীতার সুর আরও চড়িয়ে মোদীকে ‘আম্বানিদের দালাল’ বলে কটাক্ষ করলেন রাহুল। এদিন নয়াদিল্লীতে সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি বলেন, রাফাল দুর্নীতি কোনও সাধারণ দুর্নীতি নয়, বরং দেশদ্রোহের সমান।
সোমবার দিল্লীতে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন রাহুল। সেখানে একটি ইমেল তুলে ধরেন তিনি। কংগ্রেস নেতা কপিল সিবলও পরে টুইটারে সেটি আপলোড করেন। বিমান নির্মাণ সংস্থা এয়ারবাসের এক আধিকারিকের ইমেল আইডি থেকে ২০১৫ সালের ১৮ মার্চ চিঠিটি লেখা হয়েছিল। তাতে ওই আধিকারিক লেখেন, এক সহযোগী মারফত ফরাসি প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সঙ্গে অনিল আম্বানির গোপন সাক্ষাতের কথা জানতে পেরেছেন তিনি। বাণিজ্যিক এবং প্রতিরক্ষা বিমান নির্মাণে কাজ করতে ইচ্ছুক বলে জানিয়েছেন আম্বানি। খুব শীঘ্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফ্রান্স সফরে আসবেন। তখন দুই দেশের মধ্যে সেই সংক্রান্ত একটি মউ স্বাক্ষরিত হবে। তার প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে বলেও জানান আম্বানি।
২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ফ্রান্স সফরের দুই সপ্তাহ আগে তৎকালীন ফরাসি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জ়ঁ-ইভস লে দ্রিয়ানের প্যারিস দফতরে হাজির হন অনিল আম্বানি। জ়ঁ-ইভস লে দ্রিয়ানের উপদেষ্টা জ়ঁ ক্লঁ মলেতও হাজির ছিলেন সেখানে। বৈঠকে হাজির ছিলেন প্রাক্তন ফরাসি প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর শিল্প বিষয়ক উপদেষ্টা ক্রিস্তফ সলোমন, প্রযুক্তিগত উপদেষ্টা জিওফ্রে বুকোতও। একরকম তাড়াহুড়ো করেই বৈঠকের আয়োজন হয়েছিল বলে পরবর্তীকালে এয়ারবাস সংস্থার এক আধিকারিককে জানান সলোমন। সেই প্রেক্ষিতেই ইমেলটি লেখা হয়।
এক সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিকের প্রতিবেদনে বিষয়টি সামনে এসেছে। তাই নিয়েই ফের ঝাঁপিয়ে পড়েছে কংগ্রেস। ওই চিঠিকে হাতিয়ার করেই মোদীকে তীব্র আক্রমণ করেন রাহুল। তিনি বলেন, ‘গোপনীয়তা রক্ষার শপথ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু সে সবের ধার ধারেননি তিনি। বরং মউ স্বাক্ষর হওয়ার আগেই প্রতিরক্ষা চুক্তির গোপন তথ্য অনিল আম্বানির হাতে তুলে দিয়েছেন। রাফাল চুক্তিতে প্রধানমন্ত্রী আম্বানিদের দালালের ভূমিকা পালন করেছেন। গুপ্তচররা এই ধরনের আচরণ করে। দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, বিদেশ সচিব জানলেন না, অথচ চুক্তির খুঁটিনাটি জেনে গেলেন অনিল আম্বানি। প্রধানমন্ত্রীকে এর জবাব দিতেই হবে।’
অনিল আম্বানির সংস্থাকে রাফালের অফসেট বরাত দেওয়ায় শুরু থেকেই প্রশ্ন তুলে আসছে কংগ্রেস। তাদের অভিযোগ, ইচ্ছাকৃতভাবে বেশি দাম দিয়ে ৩৬টি রাফাল বিমান কেনার চুক্তি করেছে মোদী সরকার। সেই চুক্তির অফসেট বরাত আবার পাইয়ে দেওয়া হয়েছে অনিল আম্বানির সংস্থাকে। যুদ্ধবিমান তৈরিতে যাদের পূর্ব অভিজ্ঞতাই নেই। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে রাফাল দুর্নীতির তদন্ত হবে এবং কাউকে রেয়াত করা হবে না বলেও জানান রাহুল।