সাম্প্রতিক দেশব্যাপী কযেকটি ভোটের ফলাফল এবং কিছু সমীক্ষাই জানান দিয়েছিল যে দেশে মোদীর জনপ্রিয়তা কমছে। এবার প্রধানমন্ত্রীর টুইটারেও তারই প্রতিফলন। টুইটারে রাতারাতি ১ লক্ষ ফলোয়ার হারালেন হারালেন মোদী!
তাঁর কথার ক্যারিশ্মায় বুঁদ সকলেই। নিজেকে তিনি মানুষের সামনে এমনভাবেই তুলে ধরেন যেন, সব সমস্যার ত্রাতা তিনিই। সোশ্যাল মিডিয়াতেও নাকি তাঁর জুড়ি মেলা ভার। দেশে বিদেশে নরেন্দ্র মোদীর নাম-ই হয়ে গিয়েছে ‘টেক পিএম’। ফলে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তাঁর ফলোয়ার বেড়েছে টুইটারে। কিন্তু হঠাৎ-ই ছন্দপতন। এবং তা ঠিক তখনই, যখন শিয়রে লোকসভা ভোট। গত নভেম্বর মাসে ভুয়ো প্রোফাইল ছেঁটে ফেলার কর্মসূচি নিয়েছিলেন টুইটার কর্তৃপক্ষ। তার জেরেই একধাক্কায় এত সংখ্যক ফলোয়ার হারালেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী।
সামনে লোকসভা নির্বাচন। সেই উপলক্ষে প্রচারের মাধ্যম হিসাবে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজেপির মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে সবচেয়ে বেশি তৎপরতা ছিল। এই মুহূর্তে তা নিয়ে সচেতন হয়ে উঠেছে সব দলই। তাই আসন্ন নির্বাচনে সোশ্যাল মিডিয়া কতখানি প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই হিসাব-নিকাশ শুরু হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে সবচেয়ে এগিয়ে দিল্লীর ইন্দ্রপ্রস্থ ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী নেতা মিলিয়ে দেশের ৯২৫টি রাজনৈতিক হ্যান্ডল নিয়ে সম্প্রতি একটি গবেষণা চালায় তারা।
তাতে দেখা গেছে, নভেম্বরে টুইটারে ভুয়ো প্রোফাইল ছেঁটে ফেলা অভিযানে বহু সংখ্যক ফলোয়ার হারিয়েছেন ভারতীয় রাজনীতিকরা। গবেষণায় উঠে এসেছে, সবচেয়ে বেশি ফলোয়ার হারিয়েছেন মোদীই। ১ লক্ষ ফলোয়ার হারিয়েছেন তিনি। ভুয়ো প্রোফাইল কাটছাঁটের পর রাহুল গান্ধী হারিয়েছেন ৮ হাজার ৭০০ ফলোয়ার। দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ ফলোয়ার হারিয়েছেন যথাক্রমে ৪০ হাজার ৩০০ এবং ১৬ হাজার ৫০০ জন। এ ছাড়াও যাঁরা প্রচুর সংখ্যক ফলোয়ার হারিয়েছেন, সেই তালিকায় রয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী কিরণ রিজিজু, বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক ভূপেন্দ্র যাদব এবং সংসদের তথ্যপ্রযুক্তি কমিটির চেয়ারম্যান তথা বিজেপি সাংসদ অনুরাগ ঠাকুর।
এর আগে ২০১৬ সালে মার্কিন নির্বাচনের ফলাফলের জন্য সোশ্যাল মিডিয়াকে অনেকাংশে দায়ী করা হয়েছিল। ইউজারদের তথ্য হাতিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠেছিল কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা সংস্থার বিরুদ্ধে। যার জেরে মার্কিন কংগ্রেসের সামনে হাজিরা পর্যন্ত দিয়ে হয়েছিল ফেসবুক কর্ণধার মার্ক জুকারবার্গকে। সেই কারণেই ভারতের লোকসভা নির্বাচন নিয়ে সতর্ক হয়ে গিয়েছিল টুইটার কর্তৃপক্ষ। সময় থাকতে ভুয়ো প্রোফাইল ছেঁটে ফেলতে উদ্যোগী হয়েছিল তারা।
আইআইটি দিল্লী ও হায়দ্রাবাদের অধ্যাপক পন্নুরঙ্গম কুমারাগারুর দাবি, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় খুব কম সংখ্যক রাজনীতিকই টুইটারে যোগ দিয়েছিলেন। এখন ছোট-বড় সকলেরই টুইটার হ্যান্ডেল রয়েছে। ৯২৫টি টুইটার হ্যান্ডেল নিয়ে গবেষণা চালিয়েছি আমরা। যার মধ্যে ৫০০টিই ভেরিফায়েড।’ গবেষণায় আরেকটি তথ্য উঠে এসেছে যে, ২০১২-র নির্বাচনে প্রায় ১০ লক্ষ টুইটার হ্যান্ডল থেকে ২ কোটি ১০ লক্ষ টুইট করা হয়েছিল। সেই টুইটার হ্যান্ডলগুলির মধ্যে মাত্র ৩১.৬৪ শতাংশ এই মুহূর্তে সক্রিয়। তবে প্রতিনিয়ত ওই হ্যান্ডলগুলি থেকে টুইট করা হয়, এমন নয়। ২০১৮ সালে অন্তত একবার যে অ্যাকাউন্টগুলি থেকে টুইট করা হয়েছে, সেগুলিকেই সক্রিয় হিসাবে ধরে নেওয়া হয়েছে।
তবে হঠাতই টুইটারে এমন ফলোয়ার সংখ্যার পতন দেখে বেজায় চাপে গেরুয়া শিবির। টুইটার কর্তৃপক্ষের দেওয়া ব্যাখ্যা মতো অনেক রাজনৈতিক নেতার ফলোয়ার কমেছে ঠিকই, তবে সবচেয়ে সবচেয়ে বেশি ফলোয়ার হারিয়েছেন কিন্তু মোদীই। তাহলে কী বিরোধীদের কথাই সত্যি? আসন্ন লোকসভা ভোটে গণেশ উল্টোনোর পথে? গেরুয়া শিবিরের অন্দরে শুরু হয়েছে জোর গুঞ্জন। অন্যদিকে সিঁদূরে মেঘ দেখছেন মোদীও।