পাড়ার ক্লাবের জন্য নিজেই ৩০ ফুটের সরস্বতীর মূর্তি গড়িয়েছিলেন কৃষ্ণগঞ্জের নিহত তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস। সেই পুজোর উদ্বোধনে গিয়েই আততায়ীর গুলিতে অকালমৃত্যু ঘটে তাঁর। এই আকস্মিক ঘটনায় শোকে মুহ্যমান গোটা এলাকা। বারংবার জ্ঞান হারাচ্ছেন তাঁর স্ত্রী এবং মা। আর ফ্যালফ্যালে শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে তাঁর দেড় বছরের শিশুপুত্র সৌম্যজিত।
শনিবার রাতে জীবনের ওপর যে ঝড় নেমে এসেছে তাকে বোঝার ক্ষমতাই নেই সৌম্যজিতের। সারাদিন মায়ের কাছে থাকলেও বাবার কোলেই সে যেন বেশি নিশ্চিন্ত হত, বাবার কোলই বড্ড প্রিয় ছিল তার। গত দু’দিন ধরে বাড়িতে প্রচুর লোকের ভিড়। বাড়ির বসার ঘরে তিল ধারণের জায়গা নেই। সব্বাই রয়েছে, কিন্তু নেই শুধু তার বাবা। ভালো করে কথা ফোটেনি, কিন্তু সত্যজিৎ-এর দেড় বছরের ছেলে সৌম্যজিতের চোখের ভাষাই বলে দিচ্ছে, এসবের মাঝে কাকে খুঁজছে সে।
শনিবার যখন পাড়ার সরস্বতী পুজোর উদ্বোধনে যাচ্ছিলেন সত্যজিৎ, ছেলে পিছু নিয়েছিল। কিছুতেই ছেলেকে বাড়িতে রেখে আসতে পারেননি তিনি। শেষমেশ ছোট্ট সৌম্যজিতের জেদের কাছে হার মেনে বাধ্য হয়েই তাকে নিয়েই সরস্বতী পুজোর অনুষ্ঠানে যান। সেটাই যে শেষবার বাবার কোলে উঠছে সে তা কেউই কল্পনাও করতে পারেননি। কারণ সজ্জন বলে এলাকায় পরিচিত মানুষটির এহেন পরিণতি হতে পারে তা কেউই ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করতে পারেননি।
সেদিন পুজো প্যান্ডেলে পৌঁছে মঞ্চে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। ছেলে ততক্ষণ মন্ত্রী রত্না কর ঘোষের কাছে ছিল। সৌম্যজিতকে নিয়ে খেলায় মেতেছিলেন মন্ত্রী নিজেও। কিন্তু হঠাৎ সৌম্যজিতের খেলনা কেনার বায়না ওঠে। ছেলেকে সামলাতে কোলে নেন সত্যজিৎ। তাকে নানাভাবে ভোলানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায় ভাইয়ের কোলে দিয়ে বলেছিলেন, ওকে খেলনা কিনে দিতে। ঠিক এই সময়ের ফাঁকেই গুলি চলে। সকলে শিউড়ে উঠছেন গুলি চলার মুহূর্তে যদি সৌম্যজিত বাবার কোলে থাকত তাহলে কি হত তা ভেবে।
মর্মান্তিক এই ঘটনায় কার্যত বাকরুদ্ধ নিহত বিধায়কের স্ত্রী রূপালী। গত দু’দিনে এক মুহূর্তের জন্যও চোখের পাতা পড়েনি তাঁর। দেড় বছরের সন্তান আর স্বামী নিয়ে সবে তো সুখের সংসার বেঁধেছিলেন। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি যে সব ফুরিয়ে যাবে, তা কে জানত! তাঁকে সান্তনা দেওয়ার ভাষা নেই প্রতিবেশী, আত্মীয়দের। কাঁদতে কাঁদতে গলা শুকিয়ে গিয়েছে তাঁর। মায়ের কান্না দেখলে সৌম্যজিতকেও সামলানো কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। তাই রূপালির সামনে খুব বেশি ছেলেকে আনা হচ্ছে না। যখন ছেলেকে কাছে পাচ্ছেন, তখন তাকে বুকে আঁকড়ে এক নিঃশ্বাসে বলে যাচ্ছেন, “কাকে বাবা ডাকবি তুই? তোর কি দোষ ছিল?” যদিও কি ঘটে গেছে তা বুঝতেই পারছে না দেড় বছরের ক্ষুদে। বাবার আসার অপেক্ষায়, বাবার কোলে ওঠার অপেক্ষায় সময় কাটাচ্ছে সদ্য পিতাহারা সৌম্যজিত।