রাফাল চুক্তি নিয়ে বিস্ফোরক সরকারি নোট প্রকাশ্যে আসার পর ফের বিপদে ফেলে দিল মোদী সরকারকে। বিমান কেনা নিয়ে বোঝাপড়ায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর দফতরও তৎপর ছিল – এই অভিযোগ বরাবর উড়িয়ে এসেছে সরকার। কিন্তু সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হওয়া ২০১৫-র সেই নোট বলছে, ফ্রান্সের সঙ্গে দর কষাকষির সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দফতর তাতে নাক গলিয়েছিল। পিএমও-র এই নাক গলানো নিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কর্তারাই প্রবল আপত্তি তোলেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক বলে – হয় পিএমও নাক গলানো বন্ধ করুক, না হলে নিজেরাই দর কষাকষি করুক। প্রতিরক্ষা সচিবের হাত ঘুরে প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকরের টেবিলেও পৌঁছেছিল।
এমনকী প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের নোট-ই বলছে, প্রধানমন্ত্রীর দফতর শুধু সমান্তরাল দর কষাকষি চালায়নি। রাফাল চুক্তিতে ফরাসি সরকারের ‘সার্বভৌম গ্যারান্টি’ বা ‘ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি’ না দিলেও চলবে, এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে গিয়েছিল। বাস্তবে রাফাল-চুক্তিতে শেষ পর্যন্ত সরকারি গ্যারান্টি মেলেনি। মিললে চুক্তি রূপায়ণে আইনি দায়বদ্ধতা থাকত ফরাসি সরকারের। তার বদলে ‘লেটার অফ কমফোর্ট’ মিলেছে। যাতে শুধু চুক্তি রূপায়ণে ‘নৈতিক দায়ের’ কথা বলা রয়েছে। তদানীন্তন প্রতিরক্ষা সচিব জি মোহনকুমারও আজ মেনে নিয়েছেন – ওই নোটে শুধু রাফালের দাম নয়, সরকারি গ্যারান্টি না-থাকা নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল।
এরপরেই রাহুল গান্ধী অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের নোটই বলছে, প্রধানমন্ত্রী মোদী ফ্রান্সের সঙ্গে সমান্তরাল দর কষাকষি চালাচ্ছিলেন। প্রাক্তন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়া ওলাঁদ নিজেই বলেছেন, মোদীই অনিল অম্বানীকে বরাত দেওয়ার শর্ত জোড়েন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের নোট স্পষ্ট করে দিয়েছে, ওলাঁদ ঠিক কথা বলেছিলেন’। কংগ্রেস সভাপতির কথায়, মোদী রাফাল দুর্নীতিতে দোষী। উনি ৩০ হাজার কোটি টাকা চুরি করে নিজের বন্ধু অনিল অম্বানীকে দিয়েছেন।
এরপরেই সংসদে সরব হয় বিরোধীরা। দুদফায় লোকসভা ও রাজ্যসভা মুলতুবি করে দিতে হয়।আক্রমণের মুখে প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দফতর নাক গলায়নি। নির্দিষ্ট সময় অন্তর কাজের অগ্রগতি নিয়ে খোঁজখবর করাটা নাক গলানো নয়।’ তাঁর দাবি, ওই নোটেই তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর দফতর কাজের অগ্রগতির খোঁজ নিচ্ছে বলে ‘দেখে মনে হচ্ছে’। বিরোধীদের যুক্তি, পরীকরের এই ‘দেখে মনে হচ্ছে’ কথাতেই স্পষ্ট, পিএমও-র নাক গলানোর কথা তিনিও জানতেন না।
রাফাল চুক্তিতে তদন্তের দাবি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হলেও আদালত তা খারিজ করে দেয়। আদালতে মোদী সরকার হলফনামায় জানিয়েছিল, ফরাসি সরকারের সঙ্গে দর কষাকষি করেছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দলই। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর দফতর যে আলোচনা চালিয়েছিল, তা মোদী সরকার আদালতকে বলেনি। বিরোধীদের প্রশ্ন – লুকিয়ে রাখা তথ্য জানলে কি সুপ্রিম কোর্ট এই রায় দিত? নতুন তথ্য সামনে আসায় সুপ্রিম কোর্টের রায় পর্যালোচনা করা উচিত বলে দাবি তুলেছেন প্রবীণ আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ।