গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন উপলক্ষ্যে নিউ টাউনের কনভেনশন সেন্টারে দেশ-বিদেশের শিল্পপতি ও বাণিজ্য প্রতিনিধিদের নিয়ে ‘চাঁদের হাট’ বসেছিল। এ বছর রাজ্যের ঝুলিতে এল ২ লক্ষ ৮৪ হাজার ২৮৮.৩৩ কোটি টাকার বিনিয়ােগের প্রস্তাব। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এই লগ্নিতে ৮ থেকে ১০ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এর মধ্যে
রয়েছে চামড়া, তথ্যপ্রযুক্তি, স্টার্টআপ, অ্যামাজনের পরিষেবাক্ষেত্র, ম্যানুফ্যাকচারিং ইত্যাদি শিল্প।
মোদীর স্লোগান—‘টিম ইন্ডিয়া’! কিন্তু বাস্তব কি তাই? মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘সারা দেশ বাংলাকে অনুসরণ করবে৷ সেভাবেই রাজ্যের উন্নয়ন পরিকল্পনা চলছে।’ এরপরই তিনি মন্তব্য করেন, ‘টিম ইন্ডিয়া বলা সহজ, যদি ঠিকমতো কাজ করা যায়। কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে কোথায়?’ মমতার এই সমালোচনা যে মোদীর উদ্দেশ্যে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ তাঁর স্পষ্ট কথা, ‘ফার্স্ট অ্যাক্ট দেন রিয়্যাক্ট। অ্যাক্ট না করলে চুপ থাকুন। আমরা শুধু ঘোষণা করি না, বাস্তবে করেও দেখাই।’
গতকাল মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বনধ করি না। সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক আমাদের রাজ্যে নেই। আরও বেশি কর্মসংস্থানই সরকারের লক্ষ্য। দেশে ২ কোটি কর্মী কাজ হারিয়েছে। সেখানে আমরা ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি করেছি কর্মসংস্থান।’ এবারের এই বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনকে ‘রিমার্কেবল’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। কারণ, এই প্রথম একটি রাজ্যের সঙ্গে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দেশের কোন রাজ্যের ব্যবসায়িক সম্পর্ক, চুক্তি সম্পন্ন হল।
অনুষ্ঠানের পরে অর্থমন্ত্রী ড. অমিত মিত্রও অতিরিক্ত মুখ্য সচিব (শিল্প) আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় ও পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগমের এম ডি বন্দনা যাদবকে সঙ্গে নিয়ে বলেন, ‘অভিনব মডেল তৈরি হল আমাদের দেশে। অন্য কোনও যা রাজ্যে কখনও হয়নি। শুধু দেশের মধ্যে নয়, বিদেশের একটি রাজ্যের সঙ্গে আর একটি রাজ্যের মৌ চুক্তি, এমনটা এই প্রথম।’ সব মিলিয়ে গতকাল মোট ৮৬টি মউ স্বাক্ষরিত হয়েছে।
জানা গেছে, পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, জার্মানি, ইতালি ইত্যাদি দেশের প্রভিন্সের সঙ্গে লগ্নির প্রস্তাব ও মউ চুক্তি হয়েছে। মূলত নগরায়ন, পরিবহণ পরিকাঠামাে, অ্যাডভান্স টেকনােলজি, বিগ ডাটা, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, খনি, মিথেন গ্যাস, তথ্যপ্রযুক্তি, শিক্ষা ইত্যাদিতে চুক্তি হয়েছে। এই প্রথম অস্ট্রেলিয়া এসেছে সম্মেলনে। ওই দেশের রাষ্ট্রদূত ঘােষণা করেছেন, খুব শিগগিরই কলকাতায় অস্ট্রেলিয়ার দূতাবাস খোলা হবে।
মুখ্যমন্ত্রী এই ‘উৎসাহ’ দেখে মন্তব্য করেন, ‘শিল্পায়ন গড়তে আত্মরিকতাই আমাদের মূলধন। সিলিকন ভ্যালির রেপ্লিকা তৈরি হচ্ছে নিউ টাউনে। আরও ১০০ একর জমি দেওয়া হবে দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য। কগনিজেন্ট, আইকিয়া, টেক মাহিন্দ্রা, আইএস, জাপান কাটজু মিনি, আইবিএম, অ্যামাজনের মতো বিশ্বখ্যাত সংস্থা লগ্নি করছে। চীন, জাপান, ফ্রান্স, ইতালি-সহ ১২টি দেশ সহযােগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আগ্রহ বেড়েছে বিভিন্ন দেশের শিল্পপতিদের।’
‘আপনারা আবার আসুন। এখানকার মানুষের আতিথেয়তা আপনাদের মুগ্ধ করবে। সারা বিশ্ব আমার কাছে পরিবার। বিশ্বের উন্নতি মানে বাংলার উন্নতি।’ নোটবন্দী ও জিএসটির ফলে দেশ থেকে চলে যাওয়া শিল্পপতিদের উদ্দেশ্যে গতকাল এই বার্তাই দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।