প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভার ঠিক ৪৮ ঘন্টা আগেই তড়িঘড়ি জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ চালু করার বিষয়টিতে ছাড়পত্র দেয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা। শুধু তাই নয়, জানানো হয় আজ ময়নাগুড়ির জনসভা থেকেই তার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। এ নিয়ে গতকাল থেকেই অব্যাহত রাজনৈতিক টানাপোড়েন। অবশেষে আজ প্রধানমন্ত্রীর হাত দিয়ে সার্কিট বেঞ্চের উদ্বোধনের পর নৈতিকতার প্রশ্ন তুললেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘জমি দিয়েছে রাজ্য। টাকাও ঢেলেছি আমরা। আর উনি রাজ্য সরকার, হাইকোর্টকে বাদ দিয়ে উদ্বোধন করে দিলেন!’
এদিন সার্কিট বেঞ্চের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০ বছর আগে হাইকোর্টে এই সার্কিট বেঞ্চ গঠনের প্রস্তাব হয়েছিল। সার্কিট বেঞ্চের জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অনুমোদন দিয়েছিল ১৫ বছর আগেই। কিন্তু বিগত বাম ও বর্তমান তৃণমূল সরকারের টালবাহানায় এতদিন ধরে ঝুলেছিল সার্কিট বেঞ্চের বিষয়টি। এতদিন ধরে বঞ্চিত হয়েছে উত্তরবঙ্গের মানুষ।’
মোদীর অভিযোগের পর প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যে নিজে দুর্নীতিতে সিদ্ধহস্ত, তাঁর অন্যের দিকে আঙুল তোলা সাজে না।’ ময়নাগুড়িতে মোদীর সভা শেষ হতেই ইকোপার্কে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে তিনি বলেন, ‘এই মানুষটিকে নিয়ে কথা বলতে চাই না। ফাঁকা কলসি বাজে বেশি। সার্কিট বেঞ্চ কলকাতা হাইকোর্টের। ৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। জমি আমাদের টাকা, পরিকাঠামোও আমাদের। কাজটা শেষ করেছি। অথচ উদ্বোধনী মঞ্চে রাজ্য সরকারের কেউ ছিলেন না।’
তাঁর দাবি, ‘কলকাতা হাইকোর্টের কোনও বিচারপতিকে ডাকেননি। রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি নেই। যুগ্মভাবে উদ্বোধন করতে চেয়েছিলাম। এক্সপায়ারি তারিখ এগিয়ে আসায় উদ্বোধন করে দিয়েছেন। এটা লজ্জার! কোনও বিচারপতিই উপস্থিত নেই। সুপ্রিম কোর্টে চিঠি পাঠাচ্ছি।’ এরপরই মোদীর উদ্দেশ্যে তাঁর কটাক্ষ, ‘আসলে ওঁর ঘুম উড়ে গিয়েছে। এত ভয় পেয়েছেন। জগাই-মাধাই-গদাই-বিদাই ছিল আমাদের স্লোগান। সেটাও টুকলি করেছে। তা বিদাইটা কেন বলেননি? বিদাইটা তো ওঁর নিজের নাম।’
মোদীকে পাল্টা দিতে তিনি বলেন, ‘কী ভাবেন উনি নিজেকে? উনি কি এ দেশের বিগ বস? যে লাগাতার ভয় দেখিয়ে যাবেন? বাকি সবাইকে বোকা ভেবেছেন উনি। উনি কে? গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল। নির্বাচনের সময় রাজনীতি করতে আসেন। ভোট এলেই চা-ওয়ালা হয়ে যান। ভোটের সময় চা-ওয়ালা, বাকি সময় রাফাল-ওয়ালা।’ এদিন প্রধানমন্ত্রীকে ‘মিস্টার রাফাল, ম্যাডি বাবু’ বলেও কটাক্ষ করেন মমতা। বলেন, মোদী নিজে দুর্নীতির মাস্টার। ওঁর চিন্তাভাবনা অত্যন্ত নিম্নমানের। এর পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেন, ‘আমার অফিসারদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা অত সহজ নয়। দেশের সব অফিসার ঐক্যবদ্ধ।’ মমতার হুঁশিয়ারি, ‘মনে রাখবেন এখানে সেন্ট্রালের কোনও কাজ নেই। দিদিকে চমকানো অত সহজ নয়। দিদি ছোট থেকে এ রাজ্যে বড় হয়েছে।’