এবার বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থা রোজ ভ্যালির আর্থিক কেলেঙ্কারিতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) প্রাক্তন কর্তা মনোজ কুমারের বিরুদ্ধে তোলাবাজি ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে ব্যাঙ্কশাল আদালতে চার্জশিট পেশ করল কলকাতা পুলিশ। গত সপ্তাহে তা নগর দায়রা আদালতে জমা পড়েছে। প্রসঙ্গত, চিটফান্ড সংস্থা রোজভ্যালির তদন্তকারী অফিসার ছিলেন তিনি।
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কমল সোমানি নামে এক চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট শেক্সপিয়র সরণী থানায় লিখিত অভিযোগ করে জানান, প্রদীপ হিরাওয়াত নামে এক ব্যবসায়ী ৭৫ লক্ষ টাকা চেয়ে চাপ দিচ্ছেন। এই কমল সোমানির অফিসে, ২০১৬ সালে তল্লাশি অভিযান চালায় ইডি। এরপরই ইডির ভয় দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে টাকা চাওয়া হয়। তিনি ৪০ লক্ষ টাকা দিয়েও দেন। তার ভিত্তিতেই তোলাবাজি ও ষড়যন্ত্রের মামলা রুজু করে শেক্সপিয়র সরণী থানার পুলিশ। এর ভিত্তিতেই ধরা হয় প্রদীপ হিরাওয়াতকে।
প্রদীপকে জেরা করে জানা যায়, অপসারিত ইডি কর্তা মনোজ কুমারের নির্দেশে তিনি এই টাকা চেয়েছিলেন এবং তাঁর কথা মতো ওই অফিসে গিয়েছিলেন টাকা নিতে। মামলায় নাম জড়ানোর পরই মনোজ কুমার আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নেয় কলকাতা পুলিশ। মনোজকে গ্রেফতারের পর আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসে কলকাতা পুলিশের হাতে। একটি ভিডিও ফুটেজ তদন্তকারী অফিসারদের হাতে আসে। তাতে রোজভ্যালি কর্তার স্ত্রী শুভ্রা কুণ্ডুর সঙ্গে মনোজকে দেখা যায়। যা নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায়।
এর কয়েকদিন পরই ম্যাঙ্গো লেনের একটি অফিস থেকে পুলিশ ১ কোটি ৪২ লক্ষ টাকার বাতিল হওয়া ৫০০ ও ১০০০-এর নোট উদ্ধার করে। সেখান থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয় একটি কম্পিউটার। যাতে ম্যাডাম রোজভ্যালি নামে একটি ফোল্ডার ছিল। তদন্তে উঠে আসে এই ম্যাডাম আসলে শুভ্রা কুণ্ডু। আর উদ্ধার হওয়া টাকা রোজভ্যালির। যা ঘুরপথে ওই সংস্থায় গিয়েছে। এরপরই কলকাতা পুলিশের তরফে ইডির কাছে চিঠি পাঠানো হয়। তাতে বলা হয় কীভাবে রোজভ্যালির টাকা পাচারে সাহায্য করেছেন মনোজ কুমার। এরপর মনোজ কুমারকে রোজভ্যালি তদন্ত থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি ইডি থেকে তাঁকে অপসারিত করা হয়। তাঁকে শুল্ক দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
মনোজ কুমারের বিরুদ্ধে পেশ করা ওই চার্জশিটে অভিযোগ আনা হয়েছে ব্যবসায়ী প্রদীপের বিরুদ্ধেও। চার্জশিটে পুলিশ জানিয়েছে, প্রদীর হিরাওয়াত তাঁদের জানান, মনোজ কুমারের হয়ে তিনি টাকা চেয়েছিলেন। তার স্বপক্ষে কী কী প্রমাণ রয়েছে, তা তুলে ধরা হয়েছে। প্রদীপবাবু যে টাকা নেন, তার নথি দেওয়া হয়েছে সেখানে। পাশাপাশি মনোজ কুমার যে তোলাবাজি করেছিলেন, তাও বলা হয়েছে চার্জশিটে। উল্লেখ্য, ওই দুই অভিযুক্তই এখন জামিনে রয়েছেন।