ইংরেজিতে একটি কথা আছে, ‘হিস্ট্রি রিপিট ইটসেল্ফ’। বাংলায় যার অর্থ, ইতিহাস নিজের পুনরাবৃত্তি ঘটায়। গতকাল তেমনই এক ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির সাক্ষী থাকল ধর্মতলা চত্বর। ঠিক যেন ১৩ বছর আগের মেট্রো চ্যানেল। ঠিক যেন ১৩ বছর আগের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জায়গা একই। মানুষও। শুধু ইস্যুটা আলাদা। ২০০৬-এ ছিল সিঙ্গুর। এখন সিবিআই। তখনকার বিরোধী নেত্রীই আজকের মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু কেন্দ্রের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষার লড়াইয়ে ১৩ বছর আগের পুরনো ধর্ণা অস্ত্রই ব্যবহার করলেন বাংলার জননেত্রী মমতা।
গতকাল ধর্নামঞ্চে সারারাতই জেগে ছিলেন মমতা। এক মুহূর্তের জন্য দু’চোখের পাতা এক করেননি তিনি। সারাটাক্ষণ পাশে ছিলেন দোলা সেন, অরূপ বিশ্বাস, ইন্দ্রনীল সেন, ফিরহাদ হাকিম, মহুয়া মৈত্রদের মতো নেতানেত্রীরা। আর তাঁদের মধ্যমণি হয়ে সকলকে উৎসাহ জুগিয়ে গেলেন ‘দিদি’। জানা গেছে, সকলে খাওয়া-দাওয়া করেছেন কিনা সে খোঁজ-খবর নিলেও নিজে সারারাত কিচ্ছুটি দাঁতে কাটেননি মুখ্যমন্ত্রী।
রবিবার কলকাতার পুলিশ কমিশনারের লাউডন স্ট্রিটের বাংলো থেকে বেরিয়ে সোজা ধর্মতলায় পৌঁছে যান মমতা। গায়ে থাকা পাতলা চাদরটাই কানে জড়িয়ে বসে পড়েন খোলা আকাশের নীচে। একের পর এক ফোন আসতে থাকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী থেকে দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, উত্তরপ্রদেশের অখিলেশ যাদব, তামিলনাড়ুর এমকে স্ট্যালিন, বিহারের তেজস্বী যাদব, অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু-সহ দেশের তাবড় তাবড় বিজেপি বিরোধী নেতাদের তরফে পাশে থাকার বার্তা আসতে শুরু করে তাঁর কাছে।
এর পাশাপাশি চলতে থাকে মঞ্চ বাঁধার কাজ। মাঝরাতের পর রাস্তার চেয়ার ছেড়ে সেই মঞ্চে উঠে পড়েন মমতা। রাতের সঙ্গে বাড়তে থাকে ঠাণ্ডাও। একটা কাশ্মীরি শালকে ঘোমটার মতো জড়িয়েই রাত কাটিয়ে দেন তিনি। দলের সভানেত্রী রাস্তায় আর কর্মীরা ঘরে থাকেন কী করে! তাই রাত থেকেই ধর্মতলার উদ্দেশ্যে আসতে শুরু করেন শহর লাগোয়া জেলার তৃণমূল কর্মীরা। রাতে দু’চোখের পাতা এক না করলেও সকালে তাঁর এনার্জিতে কিন্তু কোনও কমতি নেই। সকাল থেকে বারবারই পায়চারি করতে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। কখনও মঞ্চের ওপরেই, আবার কখনও বা মঞ্চের পিছনে। এর পাশাপাশি দলীয় নেতাদের ডেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশও দিয়ে দিচ্ছেন দিদি। তাঁর শরীর ভাষাই বলে দিচ্ছে, ভয় দেখালেও দমে যাওয়ার পাত্র তিনি নন। দেশের গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষায় পিছুপা হবেন না তিনি।