চাপ যে বাড়ছে, সে কথা আর অস্বীকার করতে পারল না আসাম সরকার। আসামে নাগরিকত্ব বিল নিয়ে বিক্ষোভ দেখা দেওয়ার পরে এই প্রথম রাজ্য সরকার স্বীকার করল যে তারা রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে। রাজ্যের শান্তি ফেরানোটাই তাদের কাছে এখন রীতিমতো চিন্তার একটা বিষয়। সদ্যই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল লোকসভায় পাশ করিয়েছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার। কিন্তু এর ফলে যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার গুরুতর সম্ভাবনা আছে, তা-ও একপ্রকার মেনেই নিল বিজেপি শাসিত আসাম সরকার।
প্রসঙ্গত, আর কিছুদিনের মধ্যে বিলটি রাজ্যসভায় পেশ করা হবে। আসাম সরকারের আশঙ্কা তখন পুরো উত্তর-পূর্ব ভারতে বড় ধরনের অশান্তি দেখা দিতে পারে। উত্তর-পূর্ব ভারতের চারটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও ওই বিল নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। কিছুদিন আগে মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা ও মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা দিল্লীতে গিয়ে কেন্দ্র সরকারকে অনুরোধ করেন যাতে ওই বিতর্কিত বিলটি না পাশ করানো হয়। কারণ সেক্ষেত্রে পুরো উত্তর-পূর্ব ভারতে অশান্তি সৃষ্টি হবে। আগামী মে মাসেই দেশ জুড়ে লোকসভা নির্বাচন হবে। তখনও যদি অশান্তি চলতে থাকে তাহলে ভোট প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তাঁরা।
শনিবার আসাম পুলিশের ডিজি কুলধর শইকিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্য সচিব অলোক কুমার। কিছুদিন আগে দিসপুরে আসামের সচিবালয়ের সামনে নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে তিনজন নগ্ন হয়ে প্রতিবাদ দেখাতে চেষ্টা করে। পুলিশ তাদের সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করে। মুখ্যসচিব সেই ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, সরকার মনে করে জনগণের প্রতিবাদ জানানোর গণতান্ত্রিক অধিকার আছে। কিন্তু কোনও সমাজে নগ্ন হয়ে প্রতিবাদ জানানোর অধিকার থাকতে পারে না। কারও হিংসার আশ্রয় নেওয়ারও অধিকার থাকা উচিত নয়। তিনি আরও বলেন, আর কয়েক মাস পরেই দেশে সাধারণ নির্বাচন হবে। এই সময় শান্তি বজায় রাখা বিশেষ জরুরি। আপাতত পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণেই আছে।
প্রসঙ্গত, গত ৮ জানুয়ারি লোকসভায় নাগরিকত্ব আইন-১৯৫৫ সংশোধন বিল পাশ হয়। তাতে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী তিনটি দেশ থেকে অমুসলিম শরণার্থীদের জরুরি ভিত্তিতে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। লোকসভায় ওই বিল পাশ হওয়ার পরেই উত্তর-পূর্ব ভারতে বিক্ষোভ দেখা যায়। অনেকেই অভিযোগ করেন, এনডিএ সরকার অন্য দেশের নাগরিকদের ভারতে চলে আসতে উৎসাহ দিচ্ছে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন অভিযোগ করে, সরকার শরণার্থীদের মধ্যে ধর্মের ভিত্তিতে ভেদাভেদ করছে। এই বিলকে ‘সাম্প্রদায়িক বিল’ বলেও কটাক্ষ করে বিরোধীরা।