বাংলায় কর ফাঁকির মতো নানা আর্থিক দুর্নীতি রুখতে ইডির ধাঁচে নয়া সংস্থা তৈরির নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যার নাম দেওয়া হয়েছে ডিরেক্টরেট অফ রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট। অর্থ দফতরের অধীনস্থ এই সংস্থা রাজ্যের কর ফাঁকি সংক্রান্ত বিষয়টি দেখবে। এতদিন কেন্দ্রের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি-ই এই সংক্রান্ত বিষয় দেখত। অভিযান চালাত তাদের মতো করে।
শুক্রবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে রাজ্যের নতুন ডিরেক্টরেট তৈরির প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। জানা গেছে এর নেতৃত্বে থাকবেন একজন আইএএস অফিসার। এজন্য বিশেষ থানা তৈরি করা হবে। হবে বিশেষ আদালতও। সেখানে এই সংক্রান্ত যাবতীয় অভিযোগ যেমন দেখা হবে তেমনই নিষ্পত্তি করা হবে। ইতিমধ্যেই ৬১টি নতুন পদ তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্যাবিনেট।
রাজ্যের আওতাভুক্ত বিভিন্ন কর ফাঁকির অভিযোগ ওঠে অনেক সময়৷ তাদের ধরতে এতদিন যে নিয়ম ছিল তাতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হত৷ এবার তার বদল হল৷ কর ফাঁকির অভিযোগ থাকলে ডিরেক্টরেট অফ রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স এবং এনফোর্সমেন্টের আধিকারীকরা অভিযানে নামতে পারবেন৷ নতুন দফতর তৈরির ফলে কর খেলাপিদের যেমন ধরা সম্ভব তেমনই কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতাও কমবে বলে মনে করা হচ্ছে৷
এছাড়াও ক্যাবিনেট বৈঠকে আরও বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ হলদিয়া পেট্রেকেমিক্যাল-এ উদ্বৃত্ত জমিতে কারখানা তৈরির জন্য রাজ্যের কাছে আবেদন জানিয়েছিল অ্যাডভান্সড পারফরমেন্স মেটিরিয়াল প্রাইভেট লিমিটেড৷ সেই আবেদন গতকাল ক্যাবিনেটে পাশ হয়৷ ওই সংস্থাকে শিল্পায়নে ৩.৫৩ একর জমি দিচ্ছে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম। দীঘায় হোটেল, কটেজ-সহ পর্যটনের পরিকাঠামোর উন্নতিতেও জমি বরাদ্দ করার প্রস্তাবও অনুমোদিত হয়েছে মন্ত্রিসভার বৈঠকে।
অন্যদিকে, কৃষকদের শস্যবিমার খরচও এবার রাজ্যই জোগাবে। কেন্দ্র এতদিন ওই বিমার মাত্র ২০ শতাংশ টাকা দিয়েও নিজেদের প্রকল্প বলে প্রচার চালাচ্ছিল। সেই অভিযোগ তুলে আগেই মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের একার খরচে বিমা চালুর ঘোষণা করেছিলেন। গতকাল তাতেই সিলমোহর পড়ল। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে আমরা থাকব না। ক্যাবিনেটে আলোচনা হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, শস্য বিমাতেও কেন্দ্রের থেকে কোনও সাহায্য নেব না। ৮০ শতাংশ দিতে পারলে ২০ শতাংশও দিতে পারব। রাজ্যের কৃষকদের সব দায় আমাদের। তাঁদের আমরা সবরকম সাহায্য করব।’
এছাড়াও ঠিক হয়েছে, কল্যাণীতে এনএসএস টিবি হাসপাতালের যে উদ্বৃত্ত জমি রয়েছে, সেখান থেকে ১০ একর জমি কেন্দ্রের আয়ুষ মন্ত্রককে দেওয়া হবে। সেখানে তৈরি হবে যোগ ও নেচারোপ্যাথির গবেষণা কেন্দ্র ও ১০০ শয্যার হাসপাতাল। ২০১৩ সালে প্রথম বিষয়টি অনুমোদিত হয়। দেশের পাঁচটি জায়গায় তৈরি হচ্ছে এমন কেন্দ্র। এ প্রসঙ্গে ওয়েস্ট বেঙ্গল কাউন্সিল অফ যোগ নেচারোপ্যাথির সভাপতি তুষার শীল বলেন, ‘যোগ মাদারি কা খেল নয়। এটা যে চিকিৎসাবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত তা মুখ্যমন্ত্রী প্রমাণ করে দিয়েছেন। প্রথম থেকেই তিনি এই ক্ষেত্রকে গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই।’