গতকাল ঐতিহাসিক সেন্ট্রাল হল থেকেই কি শুরু হয়ে গেল আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের জন্য বিজেপির প্রচার? বাজেট অধিবেশনের প্রাক্কালে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের ভাষণ শুনে এমনটাই বলছেন অনেকে।
পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতীয় সেনার সার্জিকাল স্ট্রাইক এবং রাফাল যুদ্ধ বিমান কেনার চুক্তি, রাষ্ট্রপতির ভাষণে উল্লেখ ছিল এই দুটি বিষয়েরই। ভাষণে ঠিক এই দুটি বিষয়ের উল্লেখ করে খানিক বিরতি দেন রাষ্ট্রপতি। আর উভয়ক্ষেত্রেই বিজেপি সাংসদরা সবথেকে বেশি হাততালি দিলেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে নিজেদের শক্তি বাড়ানো দরকার৷ সার্জিকাল স্ট্রাইকের মধ্যে দিয়ে সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷ এতে সরকারের নতুন নীতি ও কৌশল প্রতিফলিত হয়েছে৷’
এর কিছু পরেই রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সরকার মনে করে প্রতিরক্ষার জন্য জরুরি ব্যবস্থা না নেওয়া মানে দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে যাওয়া৷ তাই গত বছর প্রতিরক্ষা সামগ্রী কেনার জন্য নতুন চুক্তি করা হয়েছে৷ আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বিমান বাহিনীও অত্যাধুনিক রাফাল যুদ্ধবিমান হাতে পাবে, তাতে তাদের শক্তি আরও বাড়বে৷’ দুই মন্তব্যের পরই শাসক শিবির থেকে হাততালির ঝড় ওঠে। বিজেপি সাংসদদের প্রত্যেকেই টেবিল চাপড়ান অনেকক্ষণ। আর এতেই স্পষ্ট হয়ে যায় বিরোধীরা অভিযোগ করলেও এই দুটি বিষয়কে সরকারের সাফল্য হিসাবেই দেখছেন রাষ্ট্রপতি।
ফি-বছর সংসদের বাজেট অধিবেশনের আগে সেন্ট্রাল হলে যৌথ সভায় রাষ্ট্রপতির ভাষণ চিরাচরিত প্রথা। আর সেই ভাষণের বিষয়বস্তু তৈরি করে দেয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাই। ফলে রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের অনেকটা অংশ জুড়ে সরকারের গুণগানই থাকে। তবে এবার রাষ্ট্রপতির ভাষণের আগাগোড়াই পুরনো(ইউপিএ) সরকারের সঙ্গে মোদী সরকারের তুলনা। আরও স্পষ্ট করে বলা যায়, রাষ্ট্রপতির দাবি, ইউপিএ সরকারের আমলে দীর্ঘদিন ধরে দেশের সাধারণ ও গরীব মানুষ, যুব, দলিত, সংখ্যালঘু ও মহিলাদের প্রতি যে ‘অন্যায়’ চলছিল, মাত্র সাড়ে ৪ বছরেই তার অবসান ঘটিয়েছে মোদী সরকার।
রাষ্ট্রপতি বলেছেন, ২০১৪ সাল পর্যন্ত গোটা দেশ এক অনিশ্চয়তার মধ্যে চলছিল। পালাবদলের পর বর্তমান সরকার উন্নয়নের মাধ্যমে দেশকে তুলে ধরেছে। ইউপিএ সরকারের সমালোচনা করে রাষ্ট্রপতির ভাষণে বলা হয়েছে, সময় মতো রূপায়ণ করা হয়নি আসামের বগিবিল ব্রিজ-সহ যোগাযোগ ব্যবস্থায় একাধিক প্রকল্প। আবার রাষ্ট্রপতি মোদী সরকারের সমর্থনে বলেছেন, দেশের সুরক্ষার স্বার্থেই রাফাল চুক্তি করেছে মোদী সরকার। কেন্দ্রের তৈরি করে দেওয়া দেশের প্রথম নাগরিকের এই ভাষণকেই নজিরবিহীন বলে দাবি করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশ। তাঁদের মতে রাষ্ট্রপতি সরকারের কাজের প্রশংসা করবেন, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু সরাসরি পূর্বতন সরকারের নিন্দা করবেন, এমনটা আগে কখনও ঘটেনি।
রাষ্ট্রপতি ‘নতুন ভারত’ গড়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তাঁর সরকার দুর্নীতিমুক্ত সরকার গড়তে সংকল্প নিয়েছে। কোবিন্দের উঠে এসেছে মোদি সরকারের একাধিক প্রকল্পের কথাও। তিন তালাক বিল, উজ্জ্বলা যোজনা, আয়ুষ্মান ভারত, পণ্য ও পরিষেবা করের মতাে বহু প্রকল্পের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরেছেন তিনি। নোট বাতিলের সাফল্য তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেছেন, কালো টাকা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মোদী সরকারের লড়াই ও আয়কর দাতা বৃদ্ধির কথা।
তবে আশ্চর্যজনক ভাবে রাষ্ট্রপতির ভাষণে রামমন্দির প্রসঙ্গ ছিল না। তবে নাগরিকত্ব বিল ছিল৷ নাগরিকত্ব বিলের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘যে ভারতীয়রা অন্যত্র অত্যাচারের শিকার, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের ফলে তাঁদের আশ্রয় দেওয়া সহজ হবে৷’ এই কারণেই বিরোধীদের পাশাপাশি রাজনীতিবিদদের একাংশের মত, গতকাল টাউন হলে রাষ্ট্রপতির ভাষণ থেকেই শুরু হয়ে গেল বিজেপির ভোট প্রচার।