চার মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও শহরবাসীর মন থেকে মুছে যায়নি বাগরি মার্কেটের বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের কথা। ওই ঘটনায় অন্তর্ঘাতের অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে এবার চার্জশিট পেশ করল বড়বাজার থানার পুলিশ। বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে জমা দেওয়া চার্জশিটে পুলিশের দাবি, ওই মার্কেটের অগ্নিকাণ্ডের পিছনে অন্তর্ঘাত নয়, মালিকপক্ষেরই গাফিলতি রয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, জমা দেওয়া চার্জশিটে বাগরি মার্কেটের মালিক রাধা বাগরি, তাঁর ছেলে বরুণরাজ বাগরি এবং বাগরি এস্টেটের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার কৃষ্ণকুমার কোঠারিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এবং তাঁদের বিরুদ্ধে দাহ্য পদার্থ রাখা ও বাজারের রক্ষণাবেক্ষণ না করার অভিযোগে রাজ্যের ফায়ার সার্ভিস অ্যাক্টের ১১(এ), ১১(বি),১১(সি)- মোট তিনটি ধারায় মামলা করা হয়েছে। সেইসঙ্গে তিন অভিযুক্তকেই পলাতক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে চার্জশিটে। এর আগেই তাঁদের বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস এবং গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল আদালত।
২০১৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে বিধ্বংসী আগুন লাগে বাগরি মার্কেটের ক্যানিং স্ট্রিটের দিকে এ ব্লকে। বাগরির আগুন নেভাতে রীতিমতো বেগ পেতে হয় দমকলকে। দমকলের ৩০টি ইঞ্জিন প্রায় তিন দিনের চেষ্টায় আগুন নেভায়। কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল সেই অগ্নিকাণ্ডে। ঘটনার পরেই দমকলের তরফে বড়বাজার থানায় রাধা বাগরি, বরুণরাজ বাগরি এবং কৃষ্ণকুমার কোঠারির বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাত, ষড়যন্ত্র-সহ দমকল আইনের একাধিক ধারায় অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের পর থেকেই ফেরার এই ৩ জন। অবশেষে গতকাল আদালতে চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ।
সরকারি কৌঁসুলি দীপনারায়ণ পাকড়াশি জানান, ঘটনার সাড়ে চার মাসের মাথায় বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্কশাল আদালতের বিচারক মনোদীপ দাশগুপ্তের এজলাসে ওই চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে তদন্তকারীদের পক্ষ থেকে। পশ্চিমবঙ্গ দমকল আইনের এগারোর সি, জি এবং এল ধারায় ওই তিন জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মোট ২১ জন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে ওই তদন্তে।
কেন অন্তর্ঘাতের অভিযোগ খারিজ করেছে পুলিশ?
আদালতে জমা দেওয়া চার্জশিটে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ফরেন্সিকের রিপোর্টে বলা হয়েছে ওই আগুনের উৎস ছিল ক্যানিং স্ট্রিটের দিকের ফুটপাত। সেখানে থাকা একটি বিদ্যুতের মিটার বক্স থেকে প্রথমে আগুন বেরোয়। বাক্সটি প্লাস্টিকে ঢাকা ছিল। দাহ্য প্লাস্টিকের কারণে দ্রুত ওই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের কাপড়ের দোকানে। পাশাপাশি সুগন্ধির ডালা ও দাহ্য পদার্থের দোকান থাকায় দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা মার্কেটে। পুলিশের দাবি, সুগন্ধির বোতলগুলি দাহ্য বস্তুতে ঠাসা থাকায় আগুনের সংস্পর্ষে আসা মাত্রই তাতে বিস্ফোরণ ঘটে। তা থেকে আগুনের ফুলকি পড়ে ওই মার্কেটের ভিতরে।
তবে ওই আগুন লাগার পিছনে কোনও অন্তর্ঘাত না পেলেও তদন্তকারীরা তিন অভিযুক্তের একাধিক গাফিলতির খোঁজ পেয়েছেন। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, ব্যবসায়ীদের থেকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য টাকা নিলেও অভিযুক্ত ওই তিন জন মার্কেটের দেখভাল করেননি। এমনকি, অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থাও কাজ করেনি। ফলে আগুন লাগার পরে দমকল কাজ করতে নেমেও বাধা পেয়েছে। চার্জশিটে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, মার্কেটের ছাদে জলাধার থাকলেও তাতে জল ছিল না ওই তিন জনের গাফলতির জেরেই।
বিচারকের কাছে চার্জশিট পেশ করার পর অভিযুক্ত তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ। একইসঙ্গে আদালতে তাঁরা যে আগাম জামিনের আবেদন জানিয়েছেন সেটি খারিজ করার অনুরোধও জানানো হয়েছে। এর পাশাপাশি পুলিশের ওই চার্জশিটে বলা হয়েছে, বাগড়ি মার্কেট খোলার তোড়জোড় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
‘বাগরি মার্কেট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত দাস জানান, আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি আগুনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এ ব্লক বাদ দিয়ে বাকি মার্কেট খোলার অনুমতি চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর, দমকল এবং পুরসভায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেই অনুমতি মিললেই ৯৫৭টি দোকান খুলে দেওয়া হবে। জানা গেছে, আধুনিক অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা করা হয়েছে বাগরির ভিতরে। ছাদে বসানো হয়েছে প্রায় হাজার লিটার গ্যালন আয়তনের জলাধার।