দোরগোড়ায় লোকসভা ভোট। তার আগে নিয়মমাফিক খরচ চালিয়ে যেতে অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করাটাই দস্তুর। কিন্তু প্রথা ভেঙে মোদী সরকার ১ ফেব্রুয়ারি পূর্ণাঙ্গ বা সাধারণ বাজেট পেশ করতে পারে, এমন একটি বিতর্ক শুরু হতেই তা ধামাচাপা দিতে অর্থমন্ত্রকের তরফে অভূতপূর্ব ভাবে বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হল, ১ ফেব্রুয়ারি ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল ‘অন্তর্বর্তী বাজেট’-ই পেশ করবেন।
এমন বিবৃতির পরই অর্থনীতিবিদদের প্রশ্ন, লোকসভা ভোটের পরে বর্তমান সরকার থাকছে না। বিজেপি ক্ষমতায় ফিরুক বা না ফিরুক, নতুন সরকারই গঠন হবে। তাই বর্তমান সরকারের তো গোটা অর্থ বছরের জন্য নীতি ঠিক করার নৈতিক অধিকারই নেই। তা হলে আবার ‘অন্তর্বর্তী বাজেট’-ই হবে বলে অর্থ মন্ত্রকের ব্যাখ্যা দেওয়ারই বা প্রয়োজন পড়ছে কেন! প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি কাগজে-কলমে ‘অন্তর্বর্তী বাজেট’ নাম রাখলেও আসলে মোদী সরকার ক্ষমতায় ফিরলে কী করবে, বাজেটে তার দিশানির্দেশ থাকবে?
অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি আগেই বলেছিলেন, ‘প্রথা হল, ভোটের বছরে অন্তর্বর্তী বাজেটই হয়। কিন্তু অন্তর্বর্তী বাজেটে কী থাকবে, তা ঠিক করে দেশের বৃহত্তর স্বার্থ।’ বুধবার সকালে নতুন করে এই প্রশ্ন উসকে দেয় বাজেট সংক্রান্ত প্রেস বিবৃতির খসড়া। তাতে দেখা যায়, প্রেস বিবৃতির মাথায় সাধারণ বাজেট ২০১৯-২০ লেখা রয়েছে! যার অর্থ ভোটের আগে মোদী সরকার আমজনতার সামনে এমন ভাব করতে চাইছে যে তাদের ক্ষমতায় ফেরা নিশ্চিত। মাঝের লোকসভা ভোট নেহাতই একটা আনুষ্ঠানিক ব্যাপার। এর ফলে ভারতীয় নির্বাচন ব্যবস্থার গুরুত্ব খর্ব করা হচ্ছে বলেই মনে করছেন রাজনীতিবিদদের একাংশ।
তবে ওই ঘটনার পরেই তড়িঘড়ি বিতর্ক ধামাচাপা দিতে অর্থ মন্ত্রকের মুখপাত্র জানিয়ে দেন, বাজেটকে অন্তর্বর্তী বাজেট ২০১৯-২০-ই বলা হবে। তাই এ নিয়ে কোনও বিভ্রান্তির জায়গা নেই। প্রসঙ্গত, সাধারণত অন্তর্বর্তী বাজেটে আয়-ব্যয়ের হিসেব থাকলেও, লোকসভা ভোটের আগে সরকার নতুন অর্থ বছরের প্রথম চার মাস, অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত খরচ রাজকোষ থেকে ব্যয় করতে সংসদের মঞ্জুরি নিয়ে নেয়। কারণ নতুন সরকার গঠন হয়ে তার পূর্ণাঙ্গ বাজেট পাশ হতে জুলাই গড়িয়ে যায়। একেই বলে ভোট-অন-অ্যাকাউন্ট। তা ধ্বনিভোটেই পাশ হয়ে যায়।
অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা অবশ্য বলছেন, খাতায়-কলমে অন্তর্বর্তী বাজেট বলা হলেও গোটা বছরের জন্য নীতি ঘোষণা করতে আইনত কোনও বাধা নেই। একমাত্র সমস্যা হল, আয়কর ছাড়ে ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানো। লোকসভা ভোটের আগে মধ্যবিত্ত মানুষের মন জিততে মোদী সরকার আয়কর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা ২.৫ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩.৫ লক্ষ বা তার বেশি করতে পারে বলে জল্পনা তুঙ্গে। কিন্তু তার জন্য অর্থ বিলের মাধ্যমে আয়কর আইনে সংশোধন করতে হয়। ভোট-অন-অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তা হয় না। এখন মোদী সরকার কী করে সেটাই দেখার। সকলেরই চোখ এখন আগামীকালের বাজেটের দিকে।