নোট বাতিলের পর আকাশ ছুঁয়েছে দেশের বেকারত্বের হার। এমনটাই জানাচ্ছে ন্যাশনাল স্যাম্পেল সার্ভের রিপোর্ট। ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ২০১৭-১৮ বর্ষে দেশে বেকারত্বের হার ছিল ৬.১ শতাংশ। অর্থাৎ গত ৪৫ বছরের মধ্যে বেকারত্বের হার এখন সবচেয়ে বেশী।
প্রসঙ্গত, এই রিপোর্ট প্রকাশ না করা নিয়েই গত কয়েক দিন ধরে চলছিল বিতর্ক। অনুমতি থাকা সত্ত্বেও এই রিপোর্ট প্রকাশ না করায় বুধবারই ইস্তফা দেন ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল কমিশন (এনএসসি) বা জাতীয় পরিসংখ্যান কমিশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান-সহ দুই সদস্য। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, ‘ এই রিপোর্ট প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে আমাদের হাতেই। কখন প্রকাশ করা হবে, সেই সিদ্ধান্তও আমরাই নেব।’
সরকারি ভাবে এই রিপোর্ট সামনে না নিয়ে এলেও লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগেই এই রিপোর্ট ফাঁস হওয়ায় নিশ্চিত ভাবেই বিপাকে পড়বে বিজেপি। অন্য দিকে বেকারত্বকে নির্বাচনের অন্যতম ইস্যু করে তুলতে চাওয়া বিরোধীদের কাছে এই রিপোর্ট নিশ্চিত ভাবেই হয়ে উঠবে অন্যতম অস্ত্র। প্রশ্নের মুখে পড়বে ক্ষমতায় আসার আগে নরেন্দ্র মোদীর ২ কোটি কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতিও।
এই রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, ভারতবর্ষের গ্রামে বেকারত্বের হার ৫.৩ শতাংশ, সেখানে শহরাঞ্চলে বেকারত্বের হার পৌঁছেছে ৭.৮ শতাংশে। সামগ্রিক ভাবে সারা দেশে বেকারত্বের হার গত ছয় বছরে ২.২ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬.১ শতাংশে। অন্য দিকে সারা দেশের যুবসমাজের মধ্যে বেকারত্বের হার ১৩ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ শতাংশে। জানা যাচ্ছে, নতুন করে চাকরিতে ঢুকেছেন কম লোক। সেই তুলনায় বেশি লোক নানা কারণে চাকরি ছাড়ছেন।
২০১৬ সালের নভেম্বরে দেশে নোটবন্দি হয়। তারপরে এই প্রথম সমীক্ষা করল এনএসএসও। সেই সমীক্ষার রিপোর্টে জানানো হয়েছে ওই সময় দেশের বেকারত্বের হার ছিল ৬.১ শতাংশ। শেষ ১৯৭২-৭৩ সালে দেশের বেকারত্বের হার এত বেশি ছিল। ২০১১-১২ সালে দেশে বেকারত্বের হার সব থেকে কম ছিল ২.২ শতাংশ। এই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে গ্রামের শিক্ষিত মহিলাদের ক্ষেত্রে ২০০৪-০৫ থেকে ২০১১-১২ অর্থবর্ষপর্যন্ত বেকারত্বের হার ছিল যথাক্রমে ৯.৭ এবং ১৫.২ শতাংশ। সেই বেকারত্ব ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে গিয়ে পৌঁছেছে ১৭.৩ শতাংশে। গ্রামের শিক্ষিত পুরুষদের ক্ষেত্রে ২০০৪-০৫ থেকে ২০১১-১২ অর্থবর্ষ পর্যন্ত বেকারত্বের হার ছিল যথাক্রমে ৩.৫ এবং ৪.৪ শতাংশ। সেই বেকারত্বই ২০১৭-১৮ আর্থিক বর্ষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০.৫ শতাংশে।
এই রিপোর্ট অনুয়ায়ী, গ্রামের ১৫-২৯ বছর বয়সী যুবকদের ক্ষেত্রে বেকারত্বের হার এখন শোচনীয়। ২০১১-১২ সালে সমাজের এই অংশের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল ৫ শতাংশ। ২০১৭-১৮ সালে তা প্রায় তিন গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭.৪ শতাংশে। গ্রামের ১৫-২৯ বছর বয়সী মহিলাদের ক্ষেত্রেও বেকারত্বের হার উদ্বেগজনক। ২০১১-১২ সাল থেকে ২০১৭-১৮, এই ছয় বছরে তাঁদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৪.৮ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩.৬ শতাংশ।