গত বছরের শেষে বিধানসভায় মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, ‘রাজ্যে বেকারত্ব ৪০ শতাংশ কমে গেছে।’ একইসঙ্গে আগামী ২ বছরের মধ্যে ১২ লাখ কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর সেই প্রতিশ্রুতি মতো গ্রামের বেকারদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে এবার ১০ হাজার ই-রিকশা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। ওই রিকশাগুলির দামের ৩০ শতাংশ বহন করবে রাজ্য। বাকি টাকা দিতে হবে আবেদনকারীকে। স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি দফতরের তরফে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মূলত গ্রামের বাসিন্দাদের কর্মসংস্থান বা জীবিকার লক্ষ্যে কাজ করে তিনটি দফতর— পঞ্চায়েত, সমবায় এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি। এর মধ্যে শেষ দফতরটিতে রয়েছে হরেক স্কিম বা প্রকল্প, যেখানে নিজের পছন্দ মতো কাজে প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে আর্থিক সুবিধা নিতে পারেন বেকার যুবক যুবতীরা। এর মধ্যে রয়েছে স্বামী বিবেকানন্দ স্বনির্ভর কর্মসংস্থান প্রকল্পও। বেকার যুব সম্প্রদায়ের পাশাপাশি সেখানে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় পিছিয়ে পড়া শ্রেণী, সংখ্যালঘু এবং মহিলাদের। ব্যাঙ্ক ঋণের সাহায্যে ব্যক্তিগতভাবে বা গোষ্ঠী গড়ে যাতে ব্যবসা বা কোনও উদ্যোগ শুরু করা যায়, সেই কাজেই সহায়তা করে ওই প্রকল্প।
কোনও প্রকল্প শুরু করলে, সেখানে রাজ্য সরকার মূল প্রকল্পের ৩০ শতাংশ ভর্তুকি দেয়। ব্যক্তিগত স্তরে উদ্যোগ হলে ভর্তুকির পরিমাণ সর্বোচ্চ দেড় লক্ষ টাকা। যদি কোনও গোষ্ঠী সেই উদ্যোগ নেয়, তাহলে তার জন্য সর্বাধিক ভর্তুকি বরাদ্দ হয় ৩.৫ লক্ষ টাকা। সেই ৩০ শতাংশ ভর্তুকির আওতায় এবার ই-রিকশা চালু করতে চায় স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি দফতর। এ প্রসঙ্গে বিভাগীয় মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে বলেন, আমাদের তরফে প্রকল্পটির রূপরেখা চূড়ান্ত হয়েছে।
যেহেতু ওই ই-রিকশাগুলিতে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি থাকবে, সেই কারণ-সহ কয়েকটি বিষয়ে প্রশাসনিক ছাড়পত্র পেতে তা মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে অনুমতি মিললেই প্রকল্পটি চালু করা হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে দফতর ১০ হাজার ই-রিকশা চালু করার উদ্যোগ নিলেও পরবর্তী ক্ষেত্রে তা বাড়ানো হবে বলে জানা গেছে। মন্ত্রী বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই ই-রিকশা সংস্থাগুলির সঙ্গে বৈঠক করেছি। প্রকল্পটি চালু হলে রিকশর জোগানে কোনও সমস্যা হবে না।
রাজ্যের মানুষকে স্বনির্ভর করতে পরিবহণকে আগেই হাতিয়ার করেছে রাজ্য সরকার। সদ্যই গতিধারা নামে একটি প্রকল্পটি চালু করেছে পরিবহণ দফতর। যদি কোনও ব্যক্তি বাস, ট্রাক, অটো বা ট্যাক্সি কিনে তা নিজেই চালাতে চান বা ব্যবসা করতে চান, তাহলে তার জন্য আর্থিক সহায়তা দেয় রাজ্য সরকার। এখানেও ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি পেতে পারেন কোনও ব্যক্তি। এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত ভর্তুকির পাশাপাশি ব্যাঙ্ক ঋণ পেতে পারেন ওই ব্যক্তি। ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণের জোগান দিলে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে পাঁচ শতাংশ খরচ বহন করতে হয়।
তবে স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি দফতরের কর্তাদের যুক্তি, পরিবহণ দফতরের ওই স্কিমের থেকে তাঁদের দফতরের প্রকল্পটির মূল পার্থক্য হল, এখানে পরিবহণ সংক্রান্ত হাজারো বিধি বা নিয়ম মানার যেমন বাধ্যবাধকতা নেই, তেমনই এই স্কিমটি মূলত গ্রামের মানুষকে কর্মসংস্থানের দিশা দেখানোর জন্য।