মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিশ্রুতি মতো বছরের শুরুতেই জমির অধিকার পেয়েছেন ছিটমহলবাসী। ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে তাঁদের হাতে জমি সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র তুলে দেওয়ার কাজ। আর এবার রাজ্য সরকার তাদের হাতে থাকা ৯৪টি উদ্বাস্তু কলোনির বাসিন্দাদের জমির অধিকার দিচ্ছে। সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী খোদ এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়েছিল। খুব তাড়াতাড়ি ওই বাসিন্দাদের হাতে জমির স্বত্ব তুলে দেওয়া হবে।’
ওই উদ্বাস্তু কলোনিগুলির অধিকাংশ বাসিন্দাই দেশভাগের পর ওপার বাংলা থেকে এদেশে এসেছেন। এ ছাড়াও ওই সব কলোনিতে এমনও কিছু পুরনো কিছু বাসিন্দা আছেন, যারা বংশানুক্রমিকভাবে সেখানে বাস করছেন। তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হলেও, কাউকেই বঞ্চিত করা হবে না। সকলকেই জমির অধিকার দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি ওই কলোনিগুলিতে ব্যাঙ্কের মতো যে সমস্ত সংস্থা রয়েছে, তাদের ৯৯ বছরের লিজ চুক্তির আওতায় আনা হবে।
এর পরেও রাজ্যে আরও ২৯৭টি উদ্বাস্তু কলোনি বাকি থাকবে জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সেগুলির বাসিন্দাদের হাতেও জমির মালিকানা তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শীঘ্রই শুরু করা হবে। বেসরকারি মালিকানায় থাকা জমি আলোচনার মাধ্যমে কিনে নেওয়া হবে। এছাড়া রেল, বন্দর ও সেনাবাহিনীর মতো কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থার মালিকানাধীন জমিতে থাকা উদ্বাস্তু কলোনির জমির মালিকানা বাসিন্দাদের দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এর আগে আলিপুরদুয়ার, মেদিনীপুর, খড়গপুরের উদ্বাস্তু কলোনিগুলিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। শুধু আলিপুরদুয়ারেই ১ লক্ষ পরিবার উপকৃত হয়েছে।’ তবে উদ্বাস্তু সমস্যা নিয়ে এনআরসি প্রসঙ্গ তুলে কেন্দ্রের তীব্র সমালোচনা করতেও ছাড়েননি তিনি। তাঁর অভিযোগ ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড-সহ নাগরিকত্বের সমস্ত বৈধ নথি থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক কারণে মানুষকে বিদেশি প্রমাণ করার চেষ্টা চলছে।
এর পাশাপাশি তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘ইন্দিরা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান এবং জওহরলাল নেহরু ও লিয়াকত আলির মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী যাঁরা এদেশে এসেছেন, তাঁরা সবাই এদেশের নাগরিক। তা হলে নতুন করে নাগরিকত্বের কী আছে?’ তাঁর কথায়, ‘সবটাই আসলে রাজনৈতিক গিমিক।’ মোদীর নাম না করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৪ সালে নির্বাচনের আগে একটা নীতি নিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, এদেশে নাগরিকত্ব দেওয়ার আগে ৬ বছর বিদেশি তকমা দেওয়া হবে, তার পর স্বদেশি করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আসলে এরা কুৎসা, রটনা, মিথ্যে কথা বলা, ভাগাভাগির রাজনীতি করে। যেমন আসামে করল। আর যে কোনও নির্বাচনের আগেই এজেন্সিকে দিয়ে ভয় দেখায়, মিডিয়াকে দিয়ে স্টিং অপারেশন করায়। আমি সিবিআই-সহ সব এজেন্সির প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, এরা কাউকে ছাড়ে না। রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র জগৎ, শিল্প জগৎ, এমনকি সাংবাদিকদেরও ছাড়ছে না। কেউ বিরোধীতা করলেই তাঁকে রাজনৈতিকভাবে ফাঁসানো হচ্ছে এখন।’