ক্যালেন্ডার বলছে বাকি আর মাত্র একদিন। আগামী ৩১ জানুয়ারি ঘন্টা বাজতেই শুরু হয়ে যাবে ৪৩ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা। শোনা যাচ্ছে, ঐক্য, সংহতি, সম্প্রীতির সুর ছড়িয়ে পড়বে এবারের কলকাতা বইমেলায়। মেলার গেটও তৈরি হচ্ছে সেই ভাবনাকে কেন্দ্র করেই। পাশাপাশি থাকছে বইমেলার থিম দেশ গুয়াতেমালার বিভিন্ন রকম মিষ্টি চেখে দেখার সুযোগ, রোজ। তবে এবারের বইমেলার অন্যতম আকর্ষণ হতে চলেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ৫টি বই। যা প্রকাশ পেতে চলেছে মেলা প্রাঙ্গণে।
মুখ্যমন্ত্রীর লেখা ৫টি বইয়ের মধ্যে থাকছে ১টি কবিতার বই, ১টি ছড়ার বই, ২টি প্রবন্ধের বই ও ১টি উর্দু শায়েরির বই। সোমবার এমনই জানিয়েছেন পাবলিশার্স ও বুক সেলার্স গিল্ডের ডিরেক্টর ও বইগুলির প্রকাশক সুধাংশুশেখর দে। এর পাশাপাশি গতকাল সল্টলেক সেন্ট্রাল পার্ক মেলা প্রাঙ্গণের অনুষ্ঠানে তিনি জানান, গতবার বইমেলায় বেস্ট সেলার হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই।
সোমবার পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড সাংবাদিক বৈঠক করে বইমেলার বিভিন্ন দিনের অনুষ্ঠানের ব্যাপারে জানায়। সেন্ট্রাল পার্কে আয়োজিত সাংবাদিক বৈঠকে সুধাংশুশেখর দে ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়। বইমেলায় হতে চলা অনুষ্ঠান সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানাতে ত্রিদিববাবু বলেন, আগামী ৩১ জানুয়ারি বিধাননগরের সেন্ট্রাল পার্কে বইমেলার উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই দিনই বইমেলার থিম সংয়ের উদ্বোধন হবে।
আয়োজকদের তরফে জানানো হয়েছে, বইমেলায় থাকছে মোট ৯টি গেট। এর মধ্যে ১ নম্বর গেট হবে ‘সম্প্রীতি গেট’। যা একতা, সম্প্রীতি, সৌহার্দ্যের প্রতীক। ২ নম্বর গেট হবে প্রয়াত রমাপদ চৌধুরি এবং বেলাল চৌধুরির স্মরণে। ৪ ও ৫ নম্বর গেটদুটি হবে গুয়েতেমালার আর্ক অফ সান্টা ক্যাটালিনা এবং ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ মডার্ন আর্ট কার্লোস মেরিদা–র আদলে। এই দুটি গেটই মেলার থিম গেট। শান্তিনিকেতনের কলাভবনের ১০০ বছর পূর্তি। সেই ঘটনার কথা মাথায় রেখে ৯ নম্বর গেটটি বানানো হচ্ছে কলাভবনের আদলে। ৬ নম্বর গেটটি আবার বিশ্ব বাংলা গেট। এমনই ভিন্ন ভাবনায় সাজানো হবে কলকাতা বইমেলার গেটগুলি।
বইমেলার বিভিন্ন দিনে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বিশেষ দিবস পালন করার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। ১ ফেব্রুয়ারি পালন করা হবে গুয়াতেমালা দিবস। ২ ফেব্রুয়ারি সন্ধেবেলা লেপচাদের সংস্কৃতি নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান। লেপচা উন্নয়ন পর্ষদ সেখানে স্টলও দেবে। পরের দিন ৩ ফেব্রুয়ারি পালিত হবে শিশু দিবস। ওইদিন শিশুদের নিখরচায় বই দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কলকাতা বইমেলার আয়োজক পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড।
১০ ফেব্রুয়ারি বইমেলায় পালন করা হবে বাংলাদেশ দিবস পালিত হবে। ওই দিনের অনুষ্ঠানে গান গাইবেন বাংলাদেশের স্বনামধন্য গায়িকা রেজওয়ানা চৌধুরি বন্যা। এছাড়া উপস্থিত থাকবেন সে দেশের ৪ জন বিশিষ্ট লেখক। আবার মহাত্মা গান্ধীর জন্মের সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে বিশেষ স্টল দেওয়া হবে। যেখানে বইপ্রেমীরা দেখতে পাবেন তাঁর হাতে লেখা চিঠির প্রতিলিপি-সহ তাঁকে নিয়ে লেখা দুর্লভ কয়েকটি বই। কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকে দেওয়া মহাত্মা গান্ধীর হাতে বোনা সুতোও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তবে এবারের বইমেলায় অন্যতম আকর্ষণ হতে চলেছে আয়োজকদের তরফে ক্রেতাকে আস্ত লাইব্রেরি উপহার দেওয়া। বই প্রত্যেকের বাড়িতে ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য এই উপহার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। তাঁদের বক্তব্য হচ্ছে, বই কিনুন, লাইব্রেরি গড়ুন। মোট চার জনকে বই রাখার আলমারি সহ ১ লক্ষ টাকা মূল্যের বই দেওয়া হবে। প্রতিদিন ১ হাজার টাকা মূল্যের বই কিনলে ক্যাশ মেমোর বদলে একটি কুপন মিলবে। সেখান থেকে প্রতি তিনদিন অন্তর ১ জনকে ১ লক্ষ টাকার বই দেওয়া হবে। তিনি নিজের পছন্দের বই ওই পরিমাণ টাকায় কিনতে পারবেন।
এছাড়াও গুয়াতেমালা প্যাভিলিয়নে প্রতিদিন বিকেল ৪টে থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত গুয়েতেমালা ডেজার্ট ফেস্টিভ্যাল হবে। সেখানে পাওয়া যাবে সে দেশের নানা মিষ্টি। আয়োজক ইন্দো হিস্প্যানিক ল্যাঙ্গোয়েজ আকাদেমির পড়ুয়ারা। সহযোগিতায় গ্লেস প্যাটিসেরিয়ে। জানা গেছে, ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকা থেকে বইমেলায় আসবেন বিশিষ্টরা। আসবে রাশিয়ার একটি প্রতিনিধিদলও। রাশিয়ার বই বাংলায় ও বাংলা বই রুশ ভাষায় অনুবাদের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি ষষ্ঠ কলকাতা লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
এবার মেলার মাঠে স্টলগুলির মাঝে জায়গা বাড়ানো হচ্ছে। যাতে মেলায় চলাফেরা করতে আরও সুবিধা হয়। মেলায় নিরাপত্তার বিশেষ ব্যবস্থাও করা হয়েছে। মেলার ভেতরে বসানো হচ্ছে সিসিটিভি, মেলা-চত্বরে থাকছে দমকলের গাড়ি, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। যোগাযোগের সুবিধের জন্য রাজ্য তথ্যপ্রযুক্তি দপ্তরের উদ্যোগে থাকছে সেল অন হুইলস (সিওডব্লু)। এর ফলে মোবাইলে যোগাযোগ করা সহজতর হবে। গতকালই বইমেলায় অগ্নিনির্বাপণ প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে মাঠ পরিদর্শন করেন দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু। তিনি গিল্ডের সঙ্গে একটি বৈঠকও করেন।
মন্ত্রী জানান, বইমেলার দিন ৪টে করে ইঞ্জিন সবসময়ের জন্য মজুত থাকবে। এছাড়া অগ্নিনির্বাপণের প্রস্তুতি হিসেবে পাম্প ও মোটর বাইক মজুত থাকবে। বিদ্যুতের তার আরও ভাল করবার জন্য বলা হয়েছে। মঙ্গলবার ১টি ইঞ্জিন মেলা প্রাঙ্গণে চলে আসবে। সেন্ট্রাল পার্কে জোরকদমে চলছে স্টল তৈরির কাজ। মাঠ জুড়ে পেরেকে হাতুড়ি ঠোকার শব্দ। বেশ কয়েকটি প্রকাশন সংস্থার স্টল ইতিমধ্যে তৈরিও হয়েছে গেছে। আয়োজকদের তরফে জানানো হয়েছে, বইমেলা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে kolkatabookfair.net ওয়েবসাইটে।