কাঁথির মঞ্চ থেকে ‘তৃণমূল হঠাও’এর ডাক দিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। আর নিজের বক্তব্য প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে একের পর এক মিথ্যাচার করে গেলেন বলে দাবি করল তৃণমূল। তথ্য প্রমান দিয়ে শাহের সেই বক্তব্য খণ্ডনও করল রাজ্যের শাসক দল। বেআব্রু করে দিল অমিত শাহের মিথ্যাচারকে।
রাষ্ট্রপুঞ্জে পুরষ্কার জিতে নেওয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রিয় ‘কন্যাশ্রী’ এবং ‘নির্মল বাংলা’ প্রকল্প নিয়েও অমিত শাহ মিথ্যাচার করে গেছেন বলে অভিযোগ। শাহের দাবি, ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ এবং ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ প্রকল্পের অনুকরণেই যথাক্রমে ‘কন্যাশ্রী’ এবং ‘নির্মল বাংলা’ প্রকল্প ২ টি শুরু করেছেন মমতা। অথচ ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ প্রকল্পের ২ বছর আগেই শুরু হয়েছে কন্যাশ্রী। ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ শুরু হয় ২০১৫ সালে। সেখানে কন্যাশ্রী শুরু হয়েছে ২০১৩ সালেই। একইভাবে ‘স্বচ্ছ ভারত’ প্রকল্প শুরু হয় ২০১৪ সালে। তার এক বছর আগে অর্থাৎ ২০১৩ সাল থেকে শুরু হয়েছে নির্মল বাংলা প্রকল্প। সব দেখে-শুনে তৃণমূল কর্মীদের প্রশ্ন, তাহলে কে কার থেকে টুকল?
রাজনৈতিক মহলের অনেকেই বলেন, ভোট যত এগিয়ে আসবে, বিজেপি তত মেরুকরণের রাজনীতিকে তীব্র করবে। এ দিন সেই পথেই হাঁটলেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি। বললেন, ভারতে শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিলের মাধ্যমে। অভিযোগ, এখানেও মিথ্যাচার করেছেন শাহ। কারণ, এই বিল অনুযায়ী কাউকে নাগরিকত্ব পেতে হলে এই দেশে ৬ বছর বিদেশি হিসাবে থাকতে হবে। যা যথেষ্ট আপত্তিজনক বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। এমনকী হিন্দু সেন্টিমেন্ট উসকে দিতে বাংলায় কাউকে দুর্গা পুজো ও সরস্বতী পুজো করতে দেওয়া হয় না বলেও দাবি করলেন অমিত শাহ। অথচ, গত বছর বাংলায় ৩০,০০০ দুর্গা পুজো হয়েছে। ১০,০০০ স্কুলে পালন করা হয়েছে সরস্বতী পুজো। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ধর্মীয় মেরুকরণ করতেই একথা বলেছেন অমিত শাহ।
আমলে বাংলার কোনও উন্নতিই হয়নি বলে দাবি করলেন অমিত শাহ। বললেন, ‘বাংলায় কোনও শিল্প নেই। উন্নয়নের নিরিখে বাংলা দেশের ১৭ তম স্থানে।’ অথচ কেন্দ্রীয় রিপোর্টই জানাচ্ছে, উন্নয়ন, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ ও রাজস্ব ঘাটতির মোকাবিলায় বাংলা দেশের মধ্যে তৃতীয় স্থানে। আর শিল্প ক্ষেত্রে বাংলার বৃদ্ধির হার ১১.৪১ শতাংশ, যেখানে সারা দেশের বৃদ্ধির হার ৪.৪ শতাংশ। কর্মসংস্থানমুখী শিল্পের জিডিএ বৃদ্ধির নিরিখে বাংলা দেশের সেই ৫ টি রাজ্যের অন্যতম যাদের বৃদ্ধির হার জাতীয় গড়ের তুলনায় বেশী। ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্পে দেশের মধ্যে সেরা বাংলা। দক্ষতা উন্নয়ন ও ব্যবসার সহজিকরণে বাংলা দেশের সেরা।
বিজেপি চিটফাণ্ডে প্রতারিতদের বিচার দেবে বলেও দাবি করে গেছেন বিজেপি সভাপতি। কিন্তু সবাই জানে, তৃণমূলের আমলেই কাশ্মীর থেকে চিটফান্ড মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। অন্যদিকে নোটবন্দীর পর সবচেয়ে বেশী নোট জমা পড়েছে যে ব্যাঙ্কে তার ডিরেক্টর অমিত শাহ নিজেই। নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর অমিত শাহের ছেলের কোম্পানির টার্নওভার বেড়েছে ষোলো হাজার গুণ।
তৃণমূলের মতে, লোকসভা ভোটের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ব্রিগেডের মহাজোট দেখে ভয় পেয়েছে বিজেপি। তাই যেন তেন প্রকারেণ তৃণমূলকে হতোদ্যম করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে তারা। অভিযোগ, সেই জন্যই কাঁথির মঞ্চ থেকে একের পর এক মিথ্যাচার করে গেলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ।




