রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে ভারতরত্নকে। এমনটাই অভিযোগ ছিল বিরোধীদের। আবার রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত ছিল, বিজেপির বিরুদ্ধে আসামবাসীর ক্ষোভ কমাতেই ভারতরত্ন দেওয়া হয়েছে প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী ভূপেন হাজারিকাকে। সত্যিই যদি বিজেপির তেমন কোনও উদ্দেশ্য থেকে থাকে, তবে তাতে সম্পূর্ণই ব্যর্থ তারা। কারণ ভূপেন হাজারিকার ভারতরত্ন প্রাপ্তিতেও ক্ষোভ প্রশমন হয়নি আসাম বা উত্তর-পূর্ব ভারতের।
এখনও রাজ্যে রাজ্যে চলছে বিক্ষোভ। মিজোরামে যেমন প্রজাতন্ত্র দিবস পালিত হল ফাঁকা মাঠে। এমনকি চিনে চলে যাওয়ার হুমকিও দিচ্ছেন মিজোরা। নাগাল্যান্ড, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর ও ত্রিপুরাতেও চলছে নাগরিকত্ব আইন সংশোধনীর বিরোধিতা। বিজেপি নেতারা পাল্টা আক্রমণের পথ বেছে নিয়েছেন। তাতে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। ফিকে হচ্ছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ২৫-এর মধ্যে ২১ আসন পাওয়ার সম্ভাবনাও।
বিজেপির পাখির চোখ এখন হিন্দু ভোট ব্যাঙ্ক। সেই লক্ষ্যেই বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের অমুসলিম শরণার্থীদের শর্ত সাপেক্ষে ভারতীয় নাগরিকত্ব দিতে তাঁরা সচেষ্ট। কিন্তু বর্তমানে উত্তর-পূর্বের নানা সম্প্রদায়ের মানুষ বিলটি প্রত্যাহারের দাবিতে সরব। তাঁদের ক্ষোভ কমাতে প্রজাতন্ত্র দিবসের ভাষণে রাজ্যপাল জগদীশ মুখী বলেন, আসাম মোটেই বেআইনিভাবে অনুপ্রবেশকারীদের স্বর্গরাজ্য নয়। সেইসঙ্গে একাধিক উন্নয়নের ঢাক পেটান তিনি। কিন্তু এতেও বিশেষ কাজ হয়নি।
আসামের পাশাপাশি বিক্ষোভে উত্তাল মিজোরামও। সেখানের বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির সমন্বয় কমিটি এবার প্রজাতন্ত্র দিবস বয়কটের ডাক দিয়েছিল। স্বতঃস্ফূর্ত সাড়াও মিলেছিল এতে। শনিবার মিজোরামে প্রায় ফাঁকা মাঠেই প্রজাতন্ত্র দিবস পালন করতে হল। খালি চেয়ারের সারির সামনেই বক্তৃতা দিলেন রাজ্যপাল কে রাজশেখরন। অন্যদিকে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল প্রত্যাহারের দাবিতে হয় বিশাল মিছিল। সেই মিছিলের পোস্টার এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে উঠেছে। পোস্টারে লেখা ছিল, ‘হ্যালো চায়না, বাই বাই ইন্ডিয়া’।
প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ‘ভারতরত্ন’-এর জন্য প্রয়াত ভূপেন হাজারিকার নাম ঘোষিত হয়। আর তারপরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইট করে ‘শ্রী ভূপেন হাজারিকা’কে অভিনন্দন জানান। কিন্তু এই বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী প্রয়াত হয়েছেন সাত বছর আগেই। ফলে মোদীর টুইটকে হাতিয়ার করে কংগ্রেসের অভিযোগ, ভূপেন হাজারিকাকে অসম্মান করছে বিজেপি সরকার। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকিয়ার কটাক্ষ, ‘সস্তার রাজনীতি করতে গিয়ে প্রয়াত শিল্পীকেই অসম্মান করেছেন মোদী। এটা আমাদের সকল আসামবাসীর কাছেই অপমানজনক।’