কুম্ভ মেলায় লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীর ভিড়ে যমদূতের মতো রক্তমাখা কুঠার হাতে ঘুরছিল এক মূর্তিমান। তার মাথায় অন্তত ১০ জনকে খুনের অভিযোগ। শুক্রবার অবশেষে সেই দুষ্কৃতীকে কুম্ভ মেলা থেকে গ্রেফতার করল উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। নাম তার কালুয়া প্যাটেল ওরফে সুভাষ ওরফে সাই বাবা।
সাধারণতন্ত্র দিবসের আগে কালুয়ার গ্রেফতারিকে পুলিশ তাদের বড় সাফল্য বলেই মনে করছে। প্রয়াগরাজের এসএসপি নীতিন তিওয়ারি বলছেন, ‘আমাদের কাছে খবর ছিল, একজন দুষ্কৃতী কুম্ভ মেলায় ঢুকে পড়েছে। যার বিরুদ্ধে অন্তত ১০ জনকে খুনের অভিযোগ আছে। তারপর থেকেই লাগাতার তল্লাশি শুরু হয়। বাড়িয়ে দেওয়া হয় নিরাপত্তা। তবে এই সিরিয়াল কিলারকে খুঁজে বের করতে আমাদের বেশি সময় লাগেনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই হাতেনাতে ধরে ফেলা হয়। জেরার মুখে ভেঙে পড়ে কালুয়া সব স্বীকার করেছে। ওর কাছ থেকে একটা রক্তমাখা কুঠারও পেয়েছি। আমাদের প্রাথমিক অনুমান, এটা দিয়েই ও খুন করেছে।’
পুলিশ সূত্রে আরও খবর, জেরার মুখে ৩৮ বছরের কালুয়া প্যাটেল স্বীকার করেছে, গত বছর সে বেশ কয়েকজনকে খুন করেছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই সাধারণ শ্রমিক। কিন্তু কী কারণে এমন কাণ্ড? প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, কিছুটা উসকোখুসকো চেহারার কালুয়াকে দেখে অনেকেই হাসাহাসি করতেন, মজা করে তার সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করেছেন অনেকে। সেসব দেখে কালুয়া আর ক্রোধ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি। রাতের আঁধার যখন সকলে ঘুমে কাতর, সেসময়ই কুঠার দিয়ে সটান তাদের গলার কাছে কোপ দিয়ে জীবন শেষ করার পথে হেঁটেছে। এভাবেই একে একে ১০ জনের প্রাণনাশ হয়েছে কালুয়ার হাতে।
উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিকদের এ ধরনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর পেয়ে তদন্তে নামে পুলিশ। সংশ্লিষ্ট থানাগুলি থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাঁরা জানতে পারেন, ২০১৮র জুলাই থেকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে কুম্ভ মেলায় পুণ্যস্নান শুরুর আগে পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে কুম্ভ মেলাতেই গা ঢাকা দিয়েছে কালুয়া। প্রাথমিক জেরার পর তদন্তকারীরা এই নৃশংস ঘাতককে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে মনে করছেন। প্রয়াগরাজের এত বড় মেলাতেও কালুয়া কোনও নাশকতা ঘটাতে পারত। তার আগেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যাওয়ায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছে পুলিশ।