২৬ জানুয়ারির সকালে প্রজাতন্ত্র দিবসের শোভাযাত্রায় দিল্লীর রাজপথে উঠে এল দুই বাড়ির দৃশ্য। প্রথমটি কলকাতার হায়দরি মঞ্জিল। গোটা দেশ যখন স্বাধীনতার উৎসবে ব্যস্ত তখন এই বাড়িতেই অনশনে বসেছিলেন গান্ধী। উদ্দেশ্য ছিল দাঙ্গা থামানো। অন্যটি দিল্লীর বিড়লা হাউস। যে বাড়ির উঠোনে নাথুরাম গডসের গুলিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন গান্ধী।
কলকাতার বাড়ির দৃশ্য তুলে ধরেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। দ্বিতীয়টি অরবিন্দ কেজরীবালের দিল্লি সরকার। প্রশ্ন উঠেছে, নরেন্দ্র মোদীকে কি ট্যাবলোর মাধ্যমে ‘বিশেষ বার্তা’ দিলেন মমতা-কেজরীওয়াল?
গান্ধীর জন্মের সার্ধশতবর্ষে প্রজাতন্ত্র দিবসের শোভাযাত্রায় সব রাজ্যের ট্যাবলোরই বিষয় ‘গাঁধী’ হবে বলে প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। মমতা-কেজরীবাল কি সুকৌশলে মনে করিয়ে দিলেন, গাঁধীর আদর্শ আর বিজেপি-আরএসএসের আদর্শ সম্পূর্ণ বিপরীত?
বাংলা ও দিল্লী বাদে এ বছর শোভাযাত্রায় কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলির মধ্যে একমাত্র পঞ্জাবের ট্যাবলো নামছে। সেই ট্যাবলোয় জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ হল, জালিয়ানওয়ালাবাগ জাতীয় স্মারক পরিচালনার ট্রাস্ট থেকে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে সরিয়ে দিতে সংসদে বিল এনেছে মোদী সরকার।
কংগ্রেস নেতৃত্বের অভিযোগ, বিজেপি-আরএসএস মুখেই গান্ধীর কথা বলে। কিন্তু বাস্তবে সেই ধর্মীয় ভেদাভেদের রাজনীতি করে। কংগ্রেস মুখপাত্র প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদীর যুক্তি, ‘প্রধানমন্ত্রীর গদিতে টিকে থাকার বাসনা তাঁকে গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বাধ্য করে। কে ভুলতে পারে, মোদীজি এমন এক আদর্শ অনুসরণ করেন যা গান্ধীজির আদর্শের সম্পূর্ণ বিপরীত। সে কারণেই গান্ধী নিহত হন। গান্ধীজি যে সত্য ও অহিংসার কথা বলতেন, তার বিপরীত নীতি নিয়ে সরকার চালাচ্ছেন মোদী।’
ইতিহাসবিদ ও তৃণমূল সাংসদ সুগত বসু মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘স্বাধীনতার পরে এআইসিসি-র অধিবেশনে গান্ধী বলেছিলেন, কোনও মুসলমান যেন এ দেশে নিরাপত্তার অভাব বোধ না করেন। মৃত্যুর আগে ওনার শেষ অনশনও সংখ্যালঘুদের জন্য। বাংলার ট্যাবলো যে সে কথা মনে করাচ্ছে, শুনে খুশি হচ্ছি।’