মোদীর ‘আচ্ছে দিন’-এর বলি এবার তাঁর নিজের রাজ্যের মানুষই। জানা গেছে, গুজরাটে গ্রামের মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হলে, গাঁটের পয়সা খরচ হয় সবচেয়ে বেশি। এমন বিস্ফোরক তথ্য উঠে এসেছে খোদ মোদী সরকারের সমীক্ষা রিপাের্ট ন্যাশনাল হেলথ প্রোফাইল ২০১৮-তেই।
শুধু তাই নয়, বিজেপি সরকারকে রীতিমতো অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে রিপোর্টের আরও কিছু তথ্য। রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, হাসপাতাল খাতে সাধারণ মানুষের ব্যয়ের দিক থেকে সারা দেশে এগিয়ে রয়েছে গুজরাট-সহ বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি। সেখানকার শহুরে মানুষের স্বাস্থ্যখাতে খরচের হিসেব সে কথাই বলছে।
আর কী জানা যাচ্ছে ন্যাশনাল হেলথ প্রোফাইল ২০১৮ থেকে? জানা গেছে, গোটা দেশে গ্রামীণ মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হলে, প্রতিবার চিকিৎসা খাত এবং অন্যান্য ব্যয় মিলিয়ে পকেট থেকে গড়ে প্রায় ১৭ হাজার টাকা (১৬,৯৫৬ টাকা) বেরিয়ে যায়। সেই তুলনায় বাংলার গ্রামে সেই খরচ হয় জাতীয় গড়ের অনেকটাই কম, সাড়ে দশ হাজার টাকার (১০,৭৪৬ টাকা) মতো।
অন্যদিকে, বিজেপি শাসিত গুজরাটে সেই খরচ সাড়ে ৩২ হাজার টাকা (৩২,৫০৩ টাকা)। যা বাংলার তিনগুণ। এর মধ্যে চিকিৎসা খাতে মাথাপিছু খরচ পড়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকা (২৯, ৯৫৪ টাকা)। অন্যান্য খাতে ব্যয় হয় ২,৫৫০টাকা। রিপোর্টের বক্তব্য শুনে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের বক্তব্য, স্বাস্থ্য নিয়ে বাংলার সমালোচনা করার আগে বিজেপি আগে ঘর সামলাক।
তবে এখানেই শেষ নয়। হাসপাতালে একবার ভর্তি হলে চিকিৎসা ও আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে মাথাপিছু গড় খরচের দিক থেকে দেশে সবচেয়ে বেশি টাকা খসছে বিজেপি শাসিত রাজ্যের মানুষেরই। ওই সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের শহরাঞ্চলের মানুষের প্রতিবার হাসপাতালে ভর্তি হলে চিকিৎসা ও অন্যান্য খাতে গড়ে প্রায় সাড়ে ২৬হাজার টাকা (২৬, ৪৫৫ টাকা) খরচ হয়।
সেখানে বিজেপি শাসিত আসামে মাথাপিছু খরচ হয় ৫২ হাজার ৩৬৮টাকা, গােয়ায় সেই খরচ ৩৭ হাজার ৪৯ টাকা। আরেক বিজেপি শাসিত রাজ্য হিমাচল প্রদেশে এই খরচ মাথাপিছু ৩৫ হাজার ২১৭ টাকা, সদ্য কংগ্রেসের দখলে যাওয়া (সমীক্ষার সময় ক্ষমতায় ছিল বিজেপি) রাজস্থানে সেই খরচপড়ে প্রায় ৩২ হাজার টাকা (৩১, ৯৭৮ টাকা)!
গোটা বিষয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, অনেক আর্থিক প্রতিকূলতার মধ্যেও স্বাস্থ্য খাতে রাজ্যের মানুষের খরচ নূন্যতম করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি বরং এসে দেখে যাক, যদি অনুকরণ করে ভালোকিছু করতে পারে। সাধারণ মানুষকে বিপদে ফেলা ছাড়া তো ওদের আর কোনও কাজ নেই।
রাজ্যের শ্রম প্রতিমন্ত্রী এবং তৃণমূলপন্থী চিকিৎসক সংগঠনের শীর্ষ নেতা ডাঃ নির্মল মাজি বলেন, সাম্প্রতিক এক আর্থিক সমীক্ষা থেকে জানা যাচ্ছে, চিকিৎসা খাতে খরচদিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় গুজরাটের ৫৫ শতাংশ মধ্যবিত্ত এবং উচ্চ মধ্যবিত্ত মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে আসছে।