কৃষি জমি রক্ষার দাবিতে আন্দোলন করেই রাজ্যে সাড়ে তিন দশকের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার তৃণমূলের দিল্লি অভিযানেও সেই কৃষক সম্প্রদায়কে গুরুত্ব দিতে চান তৃণমূল নেত্রী। সেই লক্ষ্যেই আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কৃষক সমাবেশ করতে চলেছেন মমতা। এই সমাবেশের আয়োজন করছে পশ্চিমবঙ্গ কিষাণ খেতমজদুর তৃণমূল।
গ্রামীণ ও কৃষিজীবী মানুষের মধ্যে তৃণমূলের এই সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক আধিপত্যের পটভূমিতে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে কিষাণ খেতমজদুর তৃণমূলের তৃতীয় রাজ্য সম্মেলন। এর আগেও কলকাতায় সংগঠনের সভাপতি বেচারাম মান্নার নেতৃত্বে কৃষক সমাবেশ হয়েছে। কিন্তু এই প্রথম তাতে মমতা হাজির থাকতে চলেছেন। মাস চারেকের মধ্যে লোকসভা নির্বাচন। তার আগে রাজ্যের কৃষক সমাজের কাছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের জনবিরোধী কৃষিনীতির বিরুদ্ধে বার্তা দেবেন তৃণমূল নেত্রী। রাজনৈতিক মহলের মতে, বিজেপি’র ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে কৃষক সমাজকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধে নামাতে চায় তৃণমূল। ইতিমধ্যেই বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে যখন কৃষক বিক্ষোভ তুঙ্গে, তখন বাংলায় মা-মাটি-মানুষের সরকারের কৃষকবন্ধু ভাবমূর্তি বাড়তি গুরুত্ব এনে দিচ্ছে। শুধু এরাজ্যের পরিধিতে নয়, আসন্ন লোকসভা ভোটের নিরিখে তৃণমূলের কৃষক সম্মেলনের রাজনৈতিক তাৎপর্য জাতীয় স্তরেও বিস্তৃত। এই সম্মেলনে বাংলার সব জেলা থেকেই সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। রাজ্য সরকার কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে কী কী পদক্ষেপ করেছে, এই সমাবেশে তা তুলে ধরা হবে। দলের এক শীর্ষ নেতার মতে, লোকসভা ভোটের আগে দলের বিভিন্ন শাখা সংগঠনকে প্রস্তুত রাখতে এই সম্মেলন জরুরি। তাই এবারের সভায় মুখ্যমন্ত্রী নিজেই হাজির থাকছেন।
মমতা আগেই জানিয়েছেন, এরাজ্যে তাঁর সরকার সর্বদা কৃষকদের পাশে রয়েছে। কেন্দ্র কৃষকদের সঙ্গে বঞ্চনা করছে। ব্রিগেডের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মনে করিয়ে দিয়েছেন, কীভাবে তাঁর প্রশাসন কৃষকের স্বার্থ রক্ষা করে চলেছে। মমতা বলেন, ফসল বিমা প্রকল্পের নামে কেন্দ্র কৃষকদের থেকে প্রিমিয়াম নেয়। তারপরেও তারা বিমার টাকা পায় না। তাদের ঋণ মকুবের দাবি অগ্রাহ্য করে। ফলে ঋণগ্রস্ত কৃষক আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। মমতার দাবি, বাংলার কৃষকদের বিমার প্রিমিয়াম রাজ্য সরকারই দেয়। উল্লেখ্য, রাজ্যে কৃষক আন্দোলনই পরিবর্তন এনেছে। স্বভাবতই মমতা প্রশাসনের অগ্রাধিকারে রয়েছে বাংলার কৃষিজীবী মানুষ। বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচন সহ গ্রামাঞ্চলের সমস্ত ভোটে কৃষিজীবী মানুষ আস্থা দেখিয়েছে তৃণমূলের উপর। সংগঠনের বিস্তারেও তারা সহায়ক ভূমিকা নিয়েছে।