মাত্র ১২ বছরের ছেলেটির প্রাণ বাঁচাতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রয়োজন ছিল ১৭ লক্ষ টাকা! যার বিনিময়ে ইঞ্জেকশন কিনে, তা দিতে হবে ওই কিশোরের শরীরে। নইলে কেবল রক্তক্ষরণেই মারা যাবে সে। আশার আলো প্রায় ছিলই না মধ্যবিত্ত দম্পতি বিশ্বজিৎ ও সুপ্রীতা সাহার চোখে। কিন্তু কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং স্বাস্থ্য দফতর পাশে এসে দাঁড়াতেই বেঁচে গেল তাঁদের সন্তান রুদ্রজিৎ।
হিমোফিলিয়া নামক জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৭ লক্ষ টাকার ওষুধ অনুমোদন করে দিল স্বাস্থ্য দফতর। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে তড়িঘড়ি জোগাড় হল ওষুধ। যার ফলে আপাতত স্থিতিশীল রুদ্রজিৎ। কোথাও কেটে-ছড়ে গেলে সহজে বন্ধ হয় না রক্তক্ষরণ। ডাক্তারি পরিভাষায় এর নামই হিমোফিলিয়া। জানা গেছে, মাত্র পাঁচ বছর বয়স থেকেই দুরারোগ্য এই অসুখে আক্রান্ত সে। মাঝে মাঝেই রক্তে প্রয়োগ করতে হয় ‘ফ্যাক্টর এইট’। সাময়িক স্বস্তি মেলে তাতে।
কিন্তু এই বার সমস্যা হল বড়। গত মাসের ২৬ তারিখ থেকে প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত পড়তে শুরু করল ১২ বছরের রুদ্রজিতের। প্রতিবারের মতো মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করে, ফ্যাক্টর এইট দিয়েও হল না সমাধান। ছ’হাজার ইউনিট ফ্যাক্টর এইট দেওয়ার পরে জানা গেল, তার শরীর ফ্যাক্টর এইট রেসিস্ট করে ফেলায় আর কোনও কাজ করবে না ওই ওষুধ। এই অবস্থায় রোগীর প্রয়োজন একটি দামি ওষুধ ফিভা। তবে তা এতটাই দামি যে এক এক দিনের প্রয়োজনীয় আটটি ডোজ প্রয়োগ করতে খরচ হবে আড়াই লাখ টাকা করে! আর কম করে সাত দিনের কোর্স চালাতেই হবে। অর্থাৎ মোট খরচ ১৭ লক্ষেরও বেশি!
এই অবস্থায়, প্রথম দিন স্টক থেকেই আড়াই লক্ষ টাকা মূল্যের চার হাজার ইউনিট ফিভা রুদ্রজিতের জন্য বরাদ্দ করেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সুপার ডক্টর ইন্দ্রনীল বিশ্বাস। কিন্তু টানা সাত দিন এতটা দামি ওষুধ এক জন রোগীর জন্য দেওয়া হাসপাতালের পক্ষে সম্ভব ছিল না বলে জানালেন তিনি। ইন্দ্রনীলবাবু বলেন, ‘এ জন্য স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতি প্রয়োজন। আমি ওঁদের বলি, সরাসরি স্বাস্থ্য দফতরে আবেদন করতে। ওঁরা চিঠি লেখেন, আমি ফরোয়ার্ড করে দিই। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের মাধ্যমে ওই দিনই দফতরে চিঠি জমা করেন ওঁরা। অনুমতি আসতে সময় লাগেনি এর পরে। এখন ভাল আছে রুদ্র।’
রুদ্রজিতের মা সুপ্রীতাদেবী জানালেন, ছোটবেলা থেকেই মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা চলছে তাঁর ছেলের। তবে এই বারের মতো রক্তপাত আগে কখনও হয়নি। কিডনি থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা, যা প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীরের বাইরে আসছিল। ওই দিনই স্বাস্থ্য দফতরে পৌঁছয় আমাদের আবেদন। মঞ্জুরও হয়ে যায়। ইতিমধ্যে দ্বিতীয় দিনের ফিভার ব্যবস্থাও হাসপাতালের তরফে করে দেন সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস। তার পরেও স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে আরও পাঁচ দিন টানা চলল ফিভা। এখন ও ভাল আছে, ডাক্তাররা বলেছেন বিপদ কেটেছে। কিন্তু আরও ফিভা দরকার।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানান, সরকারি হাসপাতালে যে কোনও অসুখেই বিনামূল্য চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব। তাঁর কথায় ‘এটা ওর অধিকার। বর্তমান সরকার প্রতিটা রোগীর জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা নিশ্চিত করেছে। সেই অধিকারেই ও এই ওষুধটা পেয়েছে হাসপাতাল থেকে।’