আবারও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনায় সরব হলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার আরেক প্রাক্তন গভর্নর বিমল জালান। প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রতিষ্ঠা দিবসে যোগ দিতে এসে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন তিনি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভাকে এড়িয়ে দেশের সব সিদ্ধান্ত কী ভাবে একা প্রধানমন্ত্রী নিচ্ছেন, সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নই তুলেছেন জালান। প্রবীন অর্থনীতিবিদ এবং প্রাক্তন অর্থনৈতিক কর্তা বিমল জালানের কথায় ‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভাকে এড়িয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী’।
প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানের এক ফাঁকে এই প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী বলেন, ‘প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে আর বেশি জনমুখী হতে হবে, সরকারকেন্দ্রিক নয়। কেন্দ্র এবং রাজ্য নিজেদের মতো নীতি নেবেই। সংবিধান অনুযায়ী সেই নীতি নির্ধারণের অধিকার কেন্দ্রের রয়েছে। এবং সেটা সংবিধান অনুযায়ী কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নেওয়ার কথা। কিন্তু আমরা দেখছি, আমাদের দেশে সব সিদ্ধান্তই প্রধানমন্ত্রী নিচ্ছেন। কী করে এটা হচ্ছে? কেন তৃণমূল স্তরে কাজকর্মের ভিত্তিতে রাজনীতিবিদরা জবাব দিতে বাধ্য থাকবেন না? তরুণ প্রজন্মকে এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে। রাজনৈতিক বক্তৃতা পাল্টাতে হবে’।
এর আগে আরবিআই-এর আরও এক প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন মোদী সরকারের নানা নীতির সমালোচনা করেছেন। বিমল জালানের প্রশ্ন সেই প্রেক্ষিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। কারণ, শুধু শিক্ষাবিদ নন, জালান আরবিআই-এর গভর্নর ছাড়াও রাজ্যসভার মনোনীত সাংসদ ছিলেন। সুতরাং দেশের শীর্ষ প্রশাসনে তাঁর অভিজ্ঞতা যথেষ্ট।
বিমল জালানের বক্তব্যে বারবার উঠে এসেছে দেশের নীতি রূপায়নের ক্ষেত্রে স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলির ভূমিকা এবং গুরুত্বের কথা। বিমলের কথায়, ‘ইসিআই, ইউপিএসসি, সিএজি-র মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বের নিরিখে খুব ভাল কাজ করছে। তারা সেরা। সরকারি প্রতিষ্ঠান হলেও এরা কেন সাফল্য পেল? সহজ উত্তর হল, এরা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দায়বদ্ধ নয়, তারা জনতার কাছে দায়বদ্ধ। কেন্দ্র এবং রাজ্য যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেই নীতি কার্যকর করার ক্ষেত্রে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ভরসা রাখতে হবে। যেটা হচ্ছে না’।
ঘটনা হল, নোটবন্দী থেকে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মতো নানা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী একাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বহুদিন ধরেই তাঁর বিরুদ্ধে সরব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বিরোধীরা। শনিবারও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা ব্রিগেড সমাবেশে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে একনায়কতন্ত্রের অভিযোগ শানিয়েছেন বিরধীদলের একাধিক নেতা। সেই প্রশ্নই এবার শোনা গেল বিমল জালানের গলায়।