এবার ভারতের নাগরিকত্ব ত্যাগ করলেন পলাতক হিরে ব্যবসায়ী মেহুল চোকসি৷ এর পাশাপাশি অ্যান্টিগায় ভারতীয় হাই কমিশনে তাঁর পাসপোর্ট জমা দিয়ে দিলেন তিনি৷ দেশে প্রত্যর্পণ এড়াতেই এমন পদক্ষেপ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা তছরুপের দায়ে অভিযুক্ত চোকসির৷ এমনটাই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল৷
হাই কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, পাসপোর্ট জমা দেওয়ার পাশাপাশি অ্যান্টিগায় তাঁর নতুন ঠিকানাও জানিয়েছেন চোকসি। পলাতক এই ব্যবসায়ীর জমা দেওয়া পাসপোর্ট নম্বরটি হল জেড-৩৩৯৬৭৩২। পাসপোর্টের পাশাপাশি হাই কমিশনে ১৭৭ ডলারও তিনি জমা দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
এই ঘটনার জোর ধাক্কা খেল ঋণখেলাপী ব্যবসায়ী মেহুলকে ভারতে ফিরিয়ে আনার প্রয়াস৷ বছরের শুরুতে সংবাদসংস্থা এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, আজ নয় আগামীকাল এই সরকারের আমলে দেশত্যাগী ঋণখেলাপী ব্যবসায়ীদের ফিরিয়ে আনা হবেই৷ দেশের টাকা যারা চুরি করেছে কড়ায় গণ্ডায় সেই টাকা আদায় করে ছাড়বে সরকার৷ কিন্তু লোকসভার মুখে চোকসির এমন পদক্ষেপে আবারও ধাক্কা খেল মোদী সরকার।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের নভেম্বরে ক্যারিবিয়ান দেশ অ্যান্টিগায় নাগরিকত্ব পান মেহুল চোকসি৷ তারপরই গত বছর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে পিএনবি-প্রতারণার ঘটনা সামনে আসার আগেই ভারত ছেড়ে চম্পট দেন তিনি। ১৫ জানুয়ারি অ্যান্টিগায় নাগরিক হওয়ার শপথ নেন। আর তার কয়েকদিন পরেই ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা তছরুপের দায়ে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ায় চোকসির। ২৯ জানুয়ারি সিবিআই তাঁর ও নীরব মোদীর বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা রুজু করে। চোকসির বিরুদ্ধে গত বছর মে মাসে চার্জশিটও দাখিল করে সিবিআই। জারি হয় জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানাও।
এরপরই ওই পলাতক হিরে ব্যবসায়ীর গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে অ্যান্টিগাকে আবেদন জানায় ভারত। অ্যান্টিগায় থাকাকালীন স্থল, জল এবং আকাশপথে চোকসি যাতে যাতায়াত করতে না পারেন, সে জন্য ওই দেশের প্রশাসনের কাছে আবেদন করে নয়াদিল্লী। পাশপাশি, চোকসির প্রত্যর্পণের জন্য অ্যান্টিগার কাছে অনুরোধও জানায় ভারত। সে জন্য অ্যান্টিগায় প্রতিনিধি দল পাঠায় ভারত।
তবে অ্যান্টিগা সরকারের বক্তব্য, সেই সময়ে ভারতের কাছে সবিস্তার মেহুল সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও মামলা চলছে কি না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু কোনও অভিযোগ ছিল না বলেই তখন ভারতের তরফে জানানো হয়। এবং ভারতের সঙ্গে অ্যান্টিগার কোনও প্রত্যর্পণ চুক্তি না থাকায় মেহুলকে দেশে ফেরানোর পদক্ষেপ আটকে যায়। সে কারণেই ইন্টারপোলের দ্বারস্থ হতে হয় সিবিআই এবং ইডিকে।
অন্যদিকে, তদন্ত শুরু হতেই চোকসি আদালতকে জানান, তাঁর শরীরের অবস্থা ভালো নয়৷ সেই কারণে অ্যান্টিগুয়া থেকে ৪১ ঘণ্টা জার্নি করে ভারতে আসা সম্ভব নয়৷ অতক্ষণ বিমানে চলার মতো শারীরিক শক্তি তাঁর নেই। তবে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ইডির আধিকারিকদের সঙ্গে তদন্তে সবরকমের সাহায্য করতে কোনও আপত্তি তাঁর নেই৷ তবে এবার ভারতীয় নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ায় চোকসিকে দেশে ফেরানোর উদ্যোগ যে ফের বাধা পেল, তা বলাই বাহুল্য।