ক্ষমতায় আসার পরই গোটা রাজ্যকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিদেশী বা ভিনরাজ্যের পর্যটকদের বাংলায় টেনে আনতে তিনি পাখির চোখ করেছিলেন পর্যটনকে। সেই পথ ধরেই এবার সিঙ্গাপুর, দুবাই, ব্যাঙ্ককের মতো কলকাতার তীরেও নোঙর করবে স্টার ক্রুজ বা বিলাসবহুল প্রমোদতরী। তার দৌলতে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা আগামী দিনে পা রাখবেন কলকাতায়। ঘুরে বেড়াবেন বাংলার দর্শনীয় স্থানগুলিতে। বুধবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী জানান, কলকাতা থেকে ক্রুজ চালানোর জন্য রাজ্য সরকারের কাছে একটি প্রস্তাব জমা পড়েছে। তাতে প্রায় দু’হাজার পর্যটকের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র জানিয়েছেন, এই ধরনের ক্রুজ চলাচলের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ জলের গভীরতা থাকা দরকার। তার জন্য গঙ্গায় ড্রেজিং করার দরকার হতে পারে। এটা সুনিশ্চিত হলেই কলকাতা থেকে ক্রুজ চালু হবে। মন্ত্রীর দাবি, ‘কলকাতা তথা বাংলায় যেভাবে উন্নয়ন হচ্ছে, তা দেখার পরই এখান থেকে ক্রুজ চালানোর মতো প্রস্তাব আসছে। এতেই বোঝা যাচ্ছে, দু’হাজার আন্তর্জাতিক পর্যটক নামার মতো কলকাতায় আকর্ষণ রয়েছে। তারা বলছে, কলকাতায় ডিমান্ড আছে। এত বড় মাপের ক্রুজ এর আগে কখনও এখানে আসেনি।’
নবান্ন সূত্রের খবর, কলকাতা থেকে যে ধরনের বিলাসবহুল প্রমোদতরী চালানোর প্রস্তাব জমা পড়েছে, সেটি আদতে ভাসমান সেভেন স্টার হোটেল। তার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় দেড় থেকে দু’হাজার কোটি টাকা। এই ধরনের ক্রুজে বিলাসী পর্যটকদের আমোদপ্রমোদের জন্য সমস্ত রকম সুযোগ সুবিধা থাকে। এই তালিকায় রয়েছে, লাক্সারি স্যুইট, সিনেমা হল, অডিটোরিয়াম, সুইমিং পুল, বাস্কেটবলের কোর্ট, টেনিস কোর্ট, বিলিয়ার্ড রুম, ডিস্কোথেক, একাধিক বার ও রেস্তরাঁ এবং লন্ড্রির ব্যবস্থাও থাকে। এতে কম করে ১০-১২টি ডেক থাকে। পর্যটকদের ওঠানামার জন্য লিফটের ব্যবস্থা থাকে।
প্রসঙ্গত, কলকাতা থেকে ইতিমধ্যেই মোট চারটি ক্রুজ ভেসেল চলে। সবকটিই চলে বেসরকারি উদ্যোগে। সেগুলি মূলত হাওড়ার শালিমার জেটি থেকে ছাড়ে। মূলত ভিনদেশী পর্যটকদের গঙ্গাবক্ষে ঘোরার ব্যবস্থা করতেই এই ধরনের বিলাসবহুল ক্রুজ ভেসেল চালু হয়েছে। কলকাতা, সুন্দরবন থেকে শুরু করে উত্তরপ্রদেশের বেনারস পর্যন্ত পর্যটকদের নিয়ে যাওয়া আসা করে ক্রুজ ভেসেলগুলি।
আর জমা পড়া প্রস্তাব অনুসারে, কলকাতার আশপাশের এলাকা ঘুরিয়ে দেখানোর পাশাপাশি গঙ্গার জলপথ দিয়ে সিঙ্গাপুর, কলোম্বো, মুম্বই, চেন্নাইয়ের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেবে ক্রুজটি। তারই ফাঁকে বিদেশি পর্যটকরা কয়েক দিন কলকাতাতেও বিশ্রাম নেবেন। এই সাততারা ক্রুজকে কেন্দ্র করে রাজ্যের পর্যটন শিল্পে নতুন জোয়ার আসবে বলে আশায় বুক বাঁধছেন নবান্নের কর্তা-ব্যক্তি থেকে শুরু করে রাজ্যবাসীও।