বাম আমলে কৃষকদের দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাতে হতো। মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে তা পরে শোধ না করতে পেরে অনেকেই ডুবে যেতেন দেনার দায়ে। বেছে নিতেন আত্মহত্যার পথ। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কল্যাণে এখন আর বাংলার কৃষকদের সেই দুর্দশা নেই। কৃষকদের স্বার্থে নতুন বছরের শুরুতেই ‘কৃষকবন্ধু’ নামে এক নয়া প্রকল্প চালু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সপ্তাহ ঘুরতে না-ঘুরতেই তার বাস্তবায়নের তোড়জোর শুরু করে দিল রাজ্য।
সোমবারই কৃষকবন্ধু প্রকল্পটি নিয়ে অফিসার স্তরে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয় নবান্নে। সেই বৈঠকে ওয়েবেলকে রাজ্যের কৃষক এবং বর্গাদারদের তথ্য ভাণ্ডার তৈরি করার দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, এই প্রকল্পটির জন্য খুব শীঘ্রই সরকারি নির্দেশনামা জারি হতে চলেছে।
খাদ্যসাথী প্রকল্পের পর কৃষকবন্ধু প্রকল্পটিই হতে চলেছে রাজ্য সরকারের নিজস্ব বৃহৎ প্রকল্প। ২ টাকা কিলো দরে চাল বিলির যৌথ প্রকল্পের একটি বড় অংশের খরচ কেন্দ্র বহন করলেও তার বাইরে আরও প্রায় ২ কোটি মানুষকে ২ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহের সম্পূর্ণ খরচ রাজ্য তার নিজস্ব তহবিল থেকেই ব্যয় করে। তবে কৃষকবন্ধু প্রকল্পটি সম্পূর্ণ ভাবেই রাজ্যের নিজস্ব প্রকল্প। যে সমস্ত চাষির এক একর বা তার বেশি পরিমাণ জমি রয়েছে, তাদের বছরে ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেবে রাজ্য। দুই দফায় দেওয়া হবে ওই টাকা। ওই প্রকল্পের আওতায় আনা হচ্ছে বর্গাদারদেরও।
শুধু তাই নয়, কোনও চাষির মৃত্যু হলে এককালীন ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রাথমিক অনুমান অনুযায়ী, এই প্রকল্পে রাজ্যের ৭২ লাখ চাষি এবং বর্গাদার সরাসরি উপকৃত হবেন। এ রাজ্যে কৃষকের গড় জমির পরিমাণ ১.২ একর। ফলে কৃষকবন্ধু প্রকল্পে একজন চাষি বছরে গড়ে ৬ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য পাবেন সরকারের থেকে। প্রাথমিক ভাবে এই প্রকল্পে ৫০ লাখ চাষি উপকৃত হলেও, তার জন্য বছরে রাজ্যের ব্যয় হবে অন্তত ৩ হাজার কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, কৃষকের মৃত্যুতে ২ লাখ টাকার যে বিমার কথা রাজ্য ঘোষণা করেছে, তার জন্য প্রিমিয়ামও দিতে হবে না কোনও কৃষক পরিবারকে। সেই অর্থ বহন করবে রাজ্য নিজেই।
লোকসভা ভোটের আগে দেশের রাজনীতিতে বিস্তর প্রভাব ফেলেছে কৃষি সঙ্কট এবং তার ফলে হওয়া কৃষক বিক্ষোভ। এ নিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার তোপ দেগে চলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি কৃষকদের দুর্দশার কথা ভেবেই তিনি শস্যবিমা নিশ্চিত করার উপরে আরও জোর দিয়েছেন। দিন কয়েক আগেই দক্ষিণ ২৪ পরগনায় মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, কেন্দ্রের শস্যবিমায় মাত্র ২০% টাকা দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। সেই টাকাও না-মেলায় রাজ্য নিজের তহবিল থেকেই ১০০% অর্থ দিয়ে ‘বাংলা ফসলবিমা’ নামে নতুন একটি প্রকল্প চালু করবেন তিনি।
কৃষকবন্ধু প্রকল্পে প্রকৃত চাষি এবং বর্গাদারদের চিহ্নিতকরণ কী ভাবে করা হবে, সেই পদ্ধতিটিই চূড়ান্ত করতে সরকারি স্তরে শুরু হয়েছে আলোচনা। তবে একই ডাটা বেসে কৃষকদের নাম, এলাকা, জমির পরিমাণের মতো তথ্যগুলি তুলে রাখা হবে। বর্গাদারদের ক্ষেত্রেও তারা কত পরিমাণ জমি চাষ করেন, কতদিন ধরে চাষ করেন, এমন তথ্যগুলিও সংগ্রহ করবে রাজ্য। সেই তথ্যভাণ্ডার তৈরির দায়িত্বই দেওয়া হচ্ছে ওয়েবেলকে।
অন্যদিকে, আগামী অর্থবর্ষে কৃষকদের ৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যার ফলে উপকৃত হবেন রাজ্যের প্রায় ১ লক্ষ কৃষক পরিবার। জানা গেছে, রাজ্যের মোট ১৭টি জেলার ১৭টি সমবায় ব্যাঙ্ক এবং সমবায় সমিতির ৩৫০টি শাখার মাধ্যমে দেওয়া হবে ওই ঋণ।