‘প্রতিদিনের কোনও সংযোগ বা সম্পর্ক ছাড়াই, বিপদ দেখলে পাশে দাঁড়াতে দেরি হচ্ছে না তাঁর।’ বক্তা দু’দিন আগেই শিলচরে বিক্ষোভের মুখে পড়া বাংলার কবি শ্রীজাত। আর যাঁর উদ্দেশ্যে এমন মন্তব্য, তিনি বাংলার জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে মানুষটি কলকাতা বসেও শ্রীজাতর জন্য উদ্বেগে কাটিয়েছেন ঘন্টার পর ঘন্টা।
রবিবার শিলচর থেকে কলকাতায় ফিরে শ্রীজাত প্রথমেই লিখলেন দীর্ঘ এক ফেসবুক পোস্ট। আর সেই ফেসবুক পোস্টের বেশিরভাগটা জুড়েই রইল ‘মমতাময়ী’ মুখ্যমন্ত্রীর কথা। শ্রীজাত লিখেছেন, “সার্কিট হাউসে ঢুকছি যখন, অস্ফূট একটি নম্বর থেকে ফোন। ধরতেই দু’বছর আগের একখানা চেনা প্রশ্ন, একই কণ্ঠস্বরে – ‘কী হয়েছে আমাকে বলো তো? এখন ঠিক আছে সব?’ মুখ্যমন্ত্রী ফোন করছেন কলকাতা থেকে। অস্বস্তি হল এই ভেবে যে, বারবার আমার কারণে ব্যতিব্যস্ত হতে হচ্ছে তাঁকে। আর স্বস্তি পেলাম এই কারণে যে, প্রতিদিনের কোনও সংযোগ বা সম্পর্ক ছাড়াই, বিপদ দেখলে পাশে দাঁড়াতে দেরি হচ্ছে না তাঁর। বিশদে জানলেন সমস্তটা, আশ্বস্ত করলেন, আর কোনও অসুবিধে হবে না। ফোন রাখার আগে বললেন, ‘এবার থেকে কোথাও গেলে একটু জানিয়ে যেও, কেমন?’ শেষের এই বাক্যটির মধ্যে যে আটপৌরে গার্হস্থ্য উদ্বেগ জড়িয়েছিল, আজকের রাজনীতিতে তার দাম কম নয়।”
প্রসঙ্গত, ‘এসো বলি’ নামের এক সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্বোধন উপলক্ষে আসামের শিলচর পার্ক রোডের রিয়া প্যালেস হোটেলে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েই শনিবার হিন্দুত্ববাদীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন কবি শ্রীজাত। তাঁর নামে চলে ‘মুর্দাবাদ’ স্লোগান। পাশাপাশি হোটেলে ভাঙচুর করতেও শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা। শ্রীজাতর দাবি, তিনি প্রায় আড়াই ঘণ্টা হোটেলে বন্দি ছিলেন। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় সার্কিট হাউজে। জানা গেছে, এরপরই ঘটনার খবর পেয়ে উদ্বিগ্ন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী কথা বলেন তাঁর সঙ্গে।
রবিবার সকালেই কলকাতায় ফিরেছেন শ্রীজাত। কলকাতায় ফিরে তিনি জানান, গত দু’বছর ধরে দেশে বাক স্বাধীনতা কমছে। শিলচরে আগেও গিয়েছেন তিনি। কিন্তু এমন পরিস্থিতি তিনি এখনই টের পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন শ্রীজাত। তাঁর মতে, ‘এভাবে যদি এদেশে বাঁচতে হয়। তাহলে এর থেকে বড় লজ্জা আর নেই।’