ডানা ঝাপটে হাঁসপাখিদের ইতিউতি সরে যাওয়াই প্রমাণ দিচ্ছে সাগরে মানুষের আনাগোনার৷ ড্রেজিংয়ের যান্ত্রিক শব্দ আর স্টিমারের ঘন ঘন যাতায়াত বুঝিয়ে দিচ্ছে মুখর হয়েছে সাগর৷ প্রয়াগে এবার অর্ধকুম্ভ৷ কিন্তু তাতে কি! ধারে, ভারে কুম্ভের দিয়ে কোনও দিক থেকেই পিছিয়ে নেই সাগরদ্বীপে গঙ্গাসাগর মেলার আয়োজন৷ কারণ প্রশাসনিক দক্ষতায় সাগরমেলাকে আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এভাবেই পৌষ সংক্রান্তির পুণ্য স্নানকে ঘিরে আয়োজনের উদ্যোগে যোগীর কুম্ভকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে মমতার সাগর।
‘উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদের অর্ধকুম্ভ মেলাকে এবার সব দিক থেকে টেক্কা দিচ্ছে কপিলমুনির গঙ্গা ও সাগর সঙ্গমের মেলা। কোনও কোনও ক্ষেত্রে কুম্ভকে অনেকদিক থেকে ছাপিয়েও গিয়েছে।’ এই একই কথাই বারবার বলছেন, কুম্ভমেলায় ঘুরে আসা পুণ্যার্থী থেকে শুরু করে সরকারি আধিকারিকরাই। যেমন উত্তরপ্রদেশে থেকে সাগরমেলায় স্নান করতে এসেছেন দিগ্বিজয় সিং নামের এক পদস্থ সরকারি আধিকারিক। মেলা অফিসের ভিতর ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অত্যাধুনিক মেগা কন্ট্রোল রুমের ব্যবস্থাপনা দেখে হতবাক ওই অফিসার বললেন, এই ব্যবস্থা আমাদের ওখানকার কুম্ভতে কেউ ভাবতেই পারেনি।
তিনি আরও বলেন, ২০ বছর আগে একবার সাগরে এসেছিলাম। তখন ছিল বাম আমল। সে সময় কিন্তু তীর্থযাত্রীদের জন্য এত ভালো ব্যবস্থা ছিল না। এবার সেই বাবুঘাট থেকে শুরু করে কাকদ্বীপ লট-৮, কচুবেড়িয়া হয়ে সাগর পর্যন্ত পুণ্যার্থীদের সুরক্ষা, যাতায়াতের সহজলভ্য ব্যবস্থা, আথিতেয়তা, থাকার সুব্যবস্থা থেকে খাবার, শৌচাগার, নজরদারি— সব মিলিয়ে তুলনা নেই। সবচেয়ে অবাক করেছে, এখানকার ভিড় নিয়ন্ত্রণের আধুনিক ব্যবস্থা। মেগা কট্রোলরুমে ঢুকে আরও অবাক হয়েছি।
এক জায়গাতে বসে বাবুঘাট থেকে সাগর সব জায়গার তীর্থযাত্রীদের যাতায়াত, কোথায়-কখন গাড়ি ছাড়ছে, কোথায় কখন পৌঁছচ্ছে, ভেসেল কখন এপার থেকে ওপারে গেল, কোথায় আটকে রয়েছে, পুরোটাই ছবি সহকারে চলে আসছে। যাত্রীদের সুবিধার জন্য মাইকে বাস ও ভেসেলের সময় বলে দিচ্ছে। তার লাইভ ছবিও দেখা যাচ্ছে। কোথায় ফাঁক থাকলে ওই কন্ট্রোলরুমে বসেই তা ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে। হ্যাঁ, এমনই অত্যাধুনিক ব্যবস্থাপনায় যোগীর রাজ্যকে দশ গোল দিচ্ছে মমতার বাংলা।
মথুরাপুরের সাংসদ সিএম জাটুয়ারও দাবি, অর্ধকুম্ভর থেকে অনেক ভালো এখানকার ব্যবস্থাপনা। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগেই দিল্লী গেছিলাম। সেখানেই এ নিয়ে আমার সঙ্গে কথা হচ্ছিল এক সময় রাজ্য পুলিশে কর্মরত অফিসার হরিশ মীনার। বর্তমানে তিনি রাজস্থানের ক্যাবিনেট মন্ত্রী। তিনি কুম্ভতে গিয়েছেন। সাগরেও এসেছেন। তিনি বলেছেন, দু’টো মেলাই সর্বভারতীয়। কিন্তু এখন সাগরমেলা সব দিক থেকে এতটাই এগিয়ে গিয়েছে যে কুম্ভমেলার আয়োজকদের নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।
একই কথা শোনা গেল মেলায় ডিউটিরত উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদের বাসিন্দা এক অফিসারের মুখে। ৩ নম্বরে বাঁশের লকগেটের ব্যারিকেডের সামনে এক গাল হেসে হরিয়ানার প্রেম পুজারি বললেন, এ সাগর চেনা যাচ্ছে না। কয়েকদিন আগে এলাহাবাদের কুম্ভ থেকে স্নান সেরে সাগরে পা দিয়েছি। সরকারি তীর্থযাত্রীশালায় উঠেছি। তাঁর অভিজ্ঞতা হল, সাগরের সঙ্গে অন্য কারও তুলনা চলে না। এখানের মাহাত্ম্যই আলাদা। যতই কুম্ভমেলা হোক, সকলকে সাগরে এসে একবার ডুব দিতেই হবে। কারণ কথায় আছে, ‘সব তীর্থ বারবার গঙ্গাসাগর একবার।’