প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর দল বারবারই নিজেদের ‘রামভক্ত’ বলে প্রচার করে থাকে। তবে রাবণকে যুদ্ধে পরাজিত করার জন্য যে মা দূর্গার আরাধনা করতে হয়েছিল রামকে, বাংলায় এবার সেই দুর্গার পুজোই বন্ধ করে দিতে চাইছে মোদী সরকার। পুজো কমিটিগুলির কাছে আয়কর নোটিস পৌঁছনোর বিরোধীতায় কেন্দ্রের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে যাওয়ার বার্তা দিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বারাসতে যাত্রা উৎসবের উদ্বোধন মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, ‘একটা ক্লাবের গায়ে যদি হাত পড়ে, আমরা কেউ কিন্তু ছেড়ে কথা বলব না।’
এর পাশাপাশি, আয়কর বিভাগের তলবে সাড়া দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই— ক্লাব তথা পুজো কমিটিগুলিকে শুক্রবার এই বার্তাও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। দূর্গাপুজো কমিটিগুলিকে আয়কর বিভাগ নোটিস দেওয়ার পর থেকেই শুরু হয়ে গেছে রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড়। জানা গেছে ইতিমধ্যেই, আরও ৩৫০ ক্লাবকে নোটিস পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন আয়কর কর্তারা। এতেই ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী শুক্রবার পুজো উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমি সবক’টা ক্লাবকে বলব, একদম যাবেন না।’
প্রথম দফায় ৪০টি পুজো কমিটিকে নোটিস পাঠিয়েছিল আয়কর দফতর। তার মধ্যে ১০টি ক্লাব ইতিমধ্যেই দফতরের টিডিএস বিভাগের অফিসারদের সঙ্গে কথা বলেছে। ওই পুজো উদ্যোক্তাদের কাছে পুজোর আয়-ব্যয় সংক্রান্ত কিছু নথি চেয়েছেন দফতরের আধিকারিকরা। বাকি ক্লাব বা পুজো কমিটিগুলি এখনও আয়কর কর্তাদের সামনে হাজিরা দেয়নি। এই পরিস্থিতিতেই মুখ্যমন্ত্রী পুজো কমিটিগুলোর আয়কর না দেওয়ার পক্ষে জোরদার সওয়াল করলেন এবং আয়কর দফতরের তলবে সাড়া না দেওয়ার পরামর্শ প্রকাশ্যেই দিয়ে দিলেন।
তিরুপতি, সিদ্ধি বিনায়ক, তারকেশ্বর, জগন্নাথ মন্দির বা ফুরফুরা শরিফ, অজমেঢ় শরিফ বা স্বর্ণমন্দির কি আয়কর দেবে? প্রশ্ন তোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদি ওই সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আয়কর না দেয়, তা হলে দুর্গাপুজো উদ্যোক্তারা কেন আয়কর দেবেন? অকাট্য যুক্তি মুখ্যমন্ত্রীর। নরেন্দ্র মোদী কি বাংলায় দুর্গাপুজো বন্ধ করার চক্রান্ত করছেন? মুখ্যমন্ত্রী এ দিন সে প্রশ্নও তোলেন। তাঁর কথায়, ‘আমি শুনেছি ওরা ক্লাবগুলোকে ডিস্টার্ব করতে চাইছে। কেন ইনকাম ট্যাক্স চাইবে? ক্লাবগুলো কি লাভের জন্য পুজো করে? জনগণের দেওয়া চাঁদায় পুজো হয়। এটা তো আমাদের উৎসব। আসলে ওরা দুর্গাপুজো বন্ধ করে দিতে চাইছে।’
অন্যদিকে, পুজো কমিটিগুলোর কাছ থেকে হিসাব বুঝে নেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে তাঁরাও যে সহজে পিছু হঠবেন না, আয়কর দফতরের গতিবিধিতে তা কিন্তু স্পষ্ট। শুধু ২০১৮ সালের পুজো নয়, এর পর থেকে প্রতি বছরই যে পুজো কমিটিগুলিকে আয়-ব্যয়ের হিসেব আয়কর দফতরে দাখিল করতে হবে বলে জানা গেছে। এবং তারা যে রিটার্ন দাখিল করতে বলেছে তা জমা দিতে গেলে পুজো কমিটিগুলির কেবলমাত্র প্যান কার্ড থাকলেই হবে না, থাকতে হবে ট্যান কার্ডও। তবে আয়কর দফতর যা-ই বলুক, মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থান এ দিন বুঝিয়ে দিয়েছে, ক্লাব বা পুজো কমিটিগুলির কাছ থেকে পুজোর আয়-ব্যয়ের হিসেব আদায় করা বা কর আদায় করা খুব একটা সহজ হবে না। কারণ শারদোৎসব বাংলার গর্ব, যা তিনি কোনও মতেই বন্ধ হতে দেবেন না।