মা উড়ালপুল দিয়ে যাওয়ার সময় ‘ভুতুড়ে’ মাঞ্জা সুতোয় কখনও নাক কাটছে, কখনও গলা। দিনে দিনে লম্বা হচ্ছে উড়ালপুলে চিনা মাঞ্জা বা সিন্থেটিক মাঞ্জায় আহতের তালিকা। এই ধারালো সুতো এখন উড়ালপুলে ‘ত্রাস’ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাইক চালকদের কাছে। বারবার পুলিশের আবেদন-নিবেদনেও মেলেনি কোনও সুরাহা।
তাই এবার চীনা মাঞ্জার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিল পুলিশ। শুরু হল সিন্থেটিক মাঞ্জার বিরুদ্ধে লিফলেট বিলি। ঘুম কেড়ে নেওয়া মাঞ্জা সুতোর বিপত্তি রুখতে মাইকে প্রচারের পাশাপাশি হেল্পলাইন নম্বরও চালু করল পুলিশ। তপসিয়া থানার তরফে সেখানেই দুটি নম্বর দেওয়া হয়েছে। সিন্থেটিক মাঞ্জা ব্যবহার করে কাউকে ঘুড়ি ওড়াতে দেখলে ওই নম্বরে ফোন করে খবর দেওয়ার জন্য এলাকাবাসীকে আবেদন জানানো হয়েছে পুলিশের তরফে।
শুক্রবার সকাল থেকেই তপসিয়া এলাকায় অটো নিয়ে চীনা মাঞ্জার বিপদ নিয়ে প্রচার করতে দেখা যায় পুলিশ-প্রশাসনকে। পুলিশকর্মীরা মাইকে ঘোষণা করতে থাকেন, ‘কেউ সিন্থেটিক বা চীনা মাঞ্জার সুতোর ব্যবহার করবেন না। এতে বিপদ বাড়ছে। অনেকেই জখম হচ্ছেন। বিপদ থেকে মানুষকে রক্ষা করতে এই ধরনের সুতো বর্জন করুন।’ শুধু মাইকে ঘোষণা করেই ক্ষান্ত থাকছেন না তাঁরা। বিলি করছেন লিফলেটও। তাতে ওই বক্তব্যগুলি ছাড়াও দু’টি নির্দিষ্ট ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে— (০৩৩) ২২৮১-৪২৬৮ এবং ২২৮০-৪১০০।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মাত্র আড়াই ঘণ্টার ব্যবধানে মা উড়ালপুলে আহত হন তিনজন। অধিকাংশ দুর্ঘটনাই ঘটছে চার নম্বর ব্রিজের পরের অংশে। যার থেকে পুলিশের ধারণা ছিল উড়ালপুলের আশপাশের কোনও মাঠ বা বহুতল থেকে ওড়ানো ঘুড়ির মাঞ্জা সুতোয় দুর্ঘটনা ঘটছে। এর ফলে গোবরা হিন্দু কবরস্থানের মাঠে ঘুড়ি ওড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করে পুলিশ। কোথাও বেআইনি চিনা বা সিন্থেটিক সুতো বিক্রি হচ্ছে কি না সে দিকেও নজরদারি বাড়ানো হয়। পাশাপাশি আশপাশের বহুতলে বাড়ানো হয় নজরদারি। তবে এত কিছুর পরেও মাঞ্জা বিপত্তি রুখতে পারেনি পুলিশ। ফলে রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থা কেএমডিএকে উড়ালপুলের তিন কিলোমিটার রেলিংয়ে নেটিংয়ের প্রস্তাব দিয়েছে ট্র্যাফিক পুলিশ। যাতে ঘুড়ি রেলিংয়ে আটকে যায়।
উড়ালপুল সংলগ্ন বিস্তীর্ণ অংশ রাজ্যের প্রবীণ মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বিধায়ক এলাকার মধ্যে পড়ে। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগজনক। আমার নজরে এসেছে। এ ব্যাপারে এলাকায় একটি বৈঠক ডেকেছি। চীনা মাঞ্জার বিরুদ্ধে মানুষকে সচেনত করতে এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলব। পুলিশ নিজের মতো কাজ করছে। তবে কলকাতার গর্ব এই সেতু যাতে কারও কাছে বিপদ না হয়ে ওঠে, সেটা দেখা আমাদের বড় দায়িত্ব।’