মাত্র ২৬ বছর বয়সে আইএএস পরীক্ষায় সারা দেশের মধ্যে শীর্ষস্থান অধিকার করেছিলেন শাহ ফয়জল। কাশ্মীরের ইতিহাসে সেই প্রথম। তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। আমলা হিসাবে কাজ করার পাশাপাশি বিভিন্ন গবেষণার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। সম্মানজনক ফুলব্রাইট স্কলারশিপ পেয়ে তিনি হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলেও শিক্ষালাভ করেন। স্বাভাবিক ভাবেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরের ‘ইয়ুথ আইকন’। কিন্তু কাশ্মীরে সেনা ও পুলিশের ‘গণহত্যা’র প্রতিবাদ করে আইএএসের চাকরি ছাড়লেন কাশ্মীরের ভূমিপুত্র। আমলা হিসেবে কেরিয়ার শেষ করলেন ২০১০ ব্যাচে আইএএস পরীক্ষায় শীর্ষ স্থানাধিকারী ৩৫ বছরের শাহ ফয়জল।
এক ফেসবুক পোস্টে ইস্তফার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করে তিনি লিখেছেন, “কাশ্মীরে সন্ত্রাস দমনের নামে বেপরোয়া গণহত্যা চলছে। এত হিংসা আর নেওয়া যাচ্ছে না। এর প্রতিবাদ জানিয়েই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাছাড়া কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকেও সমস্যার সমাধানে আন্তরিক কোনও চেষ্টাই নেই। সরকার কাশ্মীরিদের সমস্যা নিয়ে সংবেদনশীলই নয়।”
কেন্দ্রের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি আরও লেখেন, “কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের দাপটে দেশে ২০ কোটি মুসলিম কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। ভারতীয় মুসলিমদের গঠনমূলক কাজকর্ম হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে। তাঁরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে গিয়েছেন। জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার প্রতি আঘাত হানা হচ্ছে। দেশজুড়ে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। জাতীয়তাবাদের নামে বিশেষ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। এর প্রতিবাদে আমি আইএএস অফিসার হিসাবে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিলাম।”
২০১৬ সালে ভারতীয় নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে হিজবুল জঙ্গি বুরহান ওয়ানি নিহত হওয়ার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়া-সহ বিভিন্ন জায়গায় ফয়জল আর ওয়ানির তুল্যমূল্য বিচার হওয়া শুরু হয়। তখন জাতীয় সংবাদ মাধ্যমের কাছে এই তুলনা বন্ধ করতে নিজেই আবেদন জানান তিনি, যা ভাল ভাবে নেননি অনেকেই। ইস্তফার প্রশ্নে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লা। তাঁর টুইট, ‘এই ঘটনা আমলাতন্ত্রের কাছে ক্ষতি, কিন্তু রাজনীতির জন্য লাভের।’ তাঁর রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা এবং জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। সূত্রের খবর, আগামী লোকসভা নির্বাচনেই বারামুলা কেন্দ্র থেকে ন্যাশনাল কনফারেন্সের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন তিনি।