চুরির অভিযোগ পেতেই অভ্যস্ত পুলিশ। চোরের পাশাপাশি চুরি যাওয়া জিনিস খুঁজে দেওয়াও তাদের কাজ। তবে এবার এমনই এক চুরির অভিযোগ এল পুলিশের কাছে যা শুনে তাজ্জব তারা। ঘটনাটি ঘটেছে নাগপুরের এক থানায়। জানা গেছে, হন্তদন্ত হয়ে থানায় ঢুকেই এক যুবক থানার কর্তব্যরত অফিসারের কাছে গিয়ে বলেন, ‘স্যার আমার এক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস চুরি গেছে। খুঁজে দিতে হবে।’ অফিসার অভিযোগ লেখার ডায়েরিটা বার করে জানতে চান, ‘কী হারিয়েছে? কোথা থেকে হারিয়েছে?’ কিন্তু উত্তরে অভিযোগকারী যা বলেন, তা শুনেই প্রায় ভিরমি খাওয়ার অবস্থা হয় ওই পুলিশ অফিসারের!
পুলিশকে কী বলেছিলেন ওই যুবক? তাঁর কথায়, ‘স্যার, আমার মন চুরি হয়ে গেছে! একটি মেয়ে চুরি করেছে সেই মন! এখন আমার চুরি যাওয়া মন খুঁজে দিতে হবে আপনাদেরই!’ এমন অভিযোগের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার। ফলে যুবকের কথার কী উত্তর দেবেন ভেবেই পাচ্ছিলেন না তিনি। অভিযোগটাই বা কী করে দায়ের হবে? এমন হৃদয়হরণ সংক্রান্ত কোনও ধারাই তো নেই ভারতীয় দণ্ডবিধিতে! তা হলে? উত্তরের খোঁজে আর বিন্দুমাত্র দেরি না করে উর্ধ্বতন অফিসারদের কাছে ফোন করেন থানায় কর্তব্যরত ওই পুলিশ অফিসার।
অভিযোগের ধরন শুনে তাঁরাও তাজ্জব হয়ে যান। কিন্তু অভিযোগ যখন এসেছে একটা সমাধান তো বার করতেই হয়। অফিসাররাও ব্যস্ত হয়ে পড়েন সমাধানের খোঁজে। নাহ! অনেক ভেবেও কোনও উপায় বার করতে পারেননি দুঁদে অফিসাররাও। শেষমেশ ঘুরেফিরে তাঁরা সেই সিদ্ধান্তেই আসেন যে, এ ধরনের অভিযোগের জন্য ভারতীয় দণ্ডবিধিতে কোনও ধারাই নেই। অভিযোগকারী ওই যুবককেও তা জানিয়ে দেওয়া হয়। ফলে অভিযোগও দায়ের হয়নি আর। চুরি যাওয়া মন ফিরে পেতে এসে শেষমেশ খালি হাতেই ফিরতে হয় ওই যুবককে। তাঁর চুরি যাওয়া মন হয়ত আজও উদ্ধার হয়নি। ধরা পড়েনি সেই মনচোরটিও।
জানা গেছে, কয়েকদিন আগেই নাগপুরের এক থানায় এই ঘটনাটি ঘটেছে। সম্প্রতি শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে চুরি হওয়া প্রায় ৮২ লক্ষ টাকার সামগ্রী মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নাগপুর পুলিশ। সেখানেই সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে নাগপুরের পুলিশ কমিশনার ভূষণকুমার উপাধ্যায় নিজে এই অদ্ভুত অভিযোগের কাহিনি শুনিয়েছেন। ঘটনাটির পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিতে গিয়ে মুখে হাসি ছড়িয়ে পড়ে তাঁর। শেষে মৃদু হেসে তিনি বলেন, ‘চুরি যাওয়া সামগ্রী ও চোরাই মালপত্র আমরা ফিরিয়ে দিতে পারি। কিন্তু অনেক সময় এমন সমস্ত অভিযোগ আসে যার কিনারা করা আমাদের পক্ষেও অসম্ভব। চুরি যাওয়া মন ফিরিয়ে দেওয়া কি পুলিশের পক্ষে সম্ভব!’