শুধুমাত্র বিরোধী দলগুলিই নয়, প্রবল আপত্তি ছিল এনডিএ শরিকদেরও। কিন্তু শরিকদের আপত্তিকেও কানে তুলল না বিজেপি। প্রবল বিক্ষোভ সত্ত্বেও মঙ্গলবার লোকসভায় পাশ হয়ে গেল জাতীয় নাগরিকপঞ্জী বিল। আজ, বুধবার রাজ্যসভায় পেশ করা হবে বিলটিকে। তাই আসল পরীক্ষা আজই।
পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা সকস্ত অমুসলিম শরনার্থীদের এদেশের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্যই এই বিলটি পাশ করাতে চাইছে কেন্দ্র। তবে কংগ্রেস-সহ সমস্ত বিরোধী দলগুলি প্রথম থেকেই এই বিলের তীব্র বিরোধিতা করে আসছে। তাঁদের দাবি, বিলটি ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক অধিকারের বিরুদ্ধে। তবে বিলটির ভবিষ্যত শেষমেশ কী হবে, তা নির্ভর করছে রাজ্যসভার ওপর। বিল পাশ করাতে একদিন বাড়ানোও হয়েছে রাজ্যসভার চলতি অধিবেশনের মেয়াদ। তবে লোকসভার মতো রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই বিজেপির। তাই শরিকদের মুখ চেয়েই থাকতে হচ্ছে তাদের। কিন্তু এই বিলের বিরোধীতায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে শরিকরাও।
বিল পাশের কথা গতকাল আগে থেকে সাংসদে জানানো ছিল না। লোকসভার আলোচ্যসূচিতেও তা উল্লেখ করা হয়নি। আচমকাই বিল পেশ করা হয়েছে। সকাল সাড়ে ৮টায় হঠাতই বিলের কপি পৌঁছে দেওয়া হয়। এই ঘটনাকে ‘নজিরবিহীন ও স্বেচ্ছাচারিতা’ বলছে বিরোধীরা। তবে শুধু বিরোধীরাই নয়, এই ঘটনার সমালোচনা করেছে বিজু জনতা দল, শিবসেনার মতো দলগুলিও। পরে নাগরিকত্ব বিল নিয়ে বিতর্কে অংশ না নিয়েই লোকসভা কক্ষ থেকে ওয়াক আউট করেন কংগ্রেসের সাংসদরা। আবার বিতর্কে অংশ নিয়ে সরকার পক্ষকে তুলোধোনা করার পর ওয়াক আউট করেন তৃণমূল সাংসদরা।
তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় ওই আইনের তীব্র বিরোধীতা করে বলেন, ‘তৃণমূল এই বিলের বিরোধীতা করছে। কারণ এই বিলে শাসক বিজেপির নখদন্ত বেরিয়ে এসেছে। সমাজে বিভেদ সৃষ্টিকারী বিল। আসামে আগুন জ্বলছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিল্লীতে বসে আন্দাজ করতে পারছেন না এই বিল পাশ হলে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে তার কী প্রভাব পড়তে পারে। এর ফলে ত্রিপুরা জ্বলবে। বাংলা অস্থির হয়ে উঠবে।’ তিনি এই বিলের বিরুদ্ধে স্পিকারের হস্তক্ষেপও দাবি করে বলেন, এই বিলে ছ’টি ধর্মের মধ্যে মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। দয়া করে এই বিলটিকে ধর্মনিরপেক্ষ করুন।
গতকাল কেন্দ্রের তরফ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বিলটি লোকসভায় পেশ করেন। এই বিল অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে পর্যন্ত বাংলাদেশ, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তান থেকে যে সমস্ত অমুসলিমরা এদেশে এসেছেন, তাঁদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। শুধু হিন্দু নয়, এই বিলের মাধ্যমে খ্রিষ্টান, জৈন, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষও এই সুবিধা পাবেন। তবে বিরোধী দল এবং নাগরিক সমাজ ইতিমধ্যে এই বিলের বিরোধিতা করে জানিয়েছে, এই বিল পাশ হয়ে আইনে পরিণত হলে ১৯৭১ সালের পর বাংলাদেশ থেকে বেআইনিভাবে এদেশে আসা হিন্দুরাও ভারতের নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন। আবার অগপ এই বিল আনার প্রতিবাদে আসামে বিজেপি জোট ছেড়ে বেরিয়ে গেছে।