‘দলের মূল সংগঠনকে বাদ দিয়ে কোনও শাখা-প্রশাখা চলবে না। আগে দলের শিকড়কে মজবুত করতে হবে, তবেই শাখা-প্রশাখার আরও ব্যাপ্তি ঘটবে।’ মঙ্গলবার ব্রিগেডের প্রস্তুতি হিসেবে কোচবিহারের রাসমেলা ময়দানের জনসভায় এভাবেই দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার বার্তা দিলেন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, দলে থেকে কেউ যদি দলেরই ক্ষতি করার চেষ্টা করে, তাঁকে রেয়াত করা হবে না বলেও সাফ জানিয়ে দেন তিনি।
অভিষেক বলেন, ‘কেউ যদি ভাবে দলকে ব্যবহার করে বা ব্লাকমেলিং করে দলকে বিপদে ফেলবে তা কিন্তু হবে না, কারণ এই জেলার পর্যবেক্ষকের নাম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে কেউ যদি দলে থেকে মিষ্টি বা লাড্ডু খাবে ভেবে দলের ক্ষতি করতে চায়, তাঁর বা তাঁদের এই তৃণমূলে কোনও জায়গা নেই।’ তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘আমার নজর সব দিকে রয়েছে, সমস্ত বিষয়ের খোঁজ খবর রাখছি। তাই এবার শেষবারের মতো সতর্ক করলাম।’
পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের টিকিট না পেয়ে দিনহাটায় নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়ানোর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘নৌকা ও হ্যারিকেন চিহ্নে নির্দল দাঁড় করিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি লাগিয়ে তৃণমূলকে আক্রমণ করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও দলনেত্রীর উদারতায় তাঁদের মাফ করে দেওয়া হয়েছে। বারবার সুযোগ দিয়ে সমঝে চলতে বলা হয়েছিল।’ এরপরই তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, যে কটা আবর্জনা পঞ্চায়েত স্তরে জনেছে রয়েছে তাঁদের ছেঁটে ফেলা হবে।
গতকালের সভায় অভিষেক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, বনমন্ত্রী বিনয় কৃষ্ণ বর্মন, কোচবিহার জেলা যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা সাংসদ পার্থপ্রতিম রায় প্রমুখ। মদনমোহন মন্দিরে পূজা দিয়ে ঠিক আড়াইটে নাগাদ রাসমেলা ময়দানে সভামঞ্চে পৌঁছন তৃণমূলের যুব সভাপতি। রাসমেলা ময়দানে লক্ষাধিক কর্মী-সমর্থকের উপস্থিতি দেখে অভিষেক বলেন, ‘এই সভা মিনি ব্রিগেড সমাবেশে পরিণত হয়েছে। যা অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।’ এ কথা শুনে হাততালিতে ফেটে পড়ে গোটা সভাস্থল। পাশাপাশি লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহারের প্রার্থীকে ৫ লক্ষেরও বেশি ভোটে জয়ী করার কথাও বলেন তিনি।
গতকালের সভাতেও বিজেপিকে তুলোধনা করতে ভোলেননি তৃণমূলের যুব সভাপতি। বিজেপির উদ্দেশ্যে তাঁর কটাক্ষ, ‘যে গরু দুধ দিয়েছিল সেই গরুই গোবর দেবে এবার।’ গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি যা আসন পেয়েছিল, এবার তার অর্ধেকটা পাবে কিনা কোনও সম্ভাবনা নেই। একইসঙ্গে কোচবিহারে রথযাত্রা নিয়ে বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করে অভিষেক বলেন, ‘কোচবিহারে রথে শুধু মদন মোহন বের হবেন। বিজেপির কাছে ধর্ম শিখতে হবে না।’ তাঁর কথায়, ওটা রথ নয় একটি বিলাসবহুল বাস। যেখানে রান্না থেকে ফুর্তি সবই করা যায়।
ব্রিগেডে দেশের তাবড় তাবড় নেতাদের উপস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেশের প্রধানমন্ত্রী করার আওয়াজ উঠবে বলেও জানান অভিষেক। তিনি বলেন, ‘আগামী দিনে আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই দেশকে পথ দেখাবেন। শুধু এই রাজ্যে নয় দেশের কোণায় কোণায় মানুষ বলবেন দিদি হাম তুমহারে সাত হে।’ আগামী মাসে তিনি ফের কোচবিহারে আসবেন বলেও জানান অভিষেক। জানা গেছে, যুব তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতির সভা উপলক্ষ্যে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাস মেলা ময়দানে এসেছিলেন প্রায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ।