দিন কয়েক আগেই এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হিন্দুত্ববাদীদের উদ্দেশ্যে রীতিমতো তোপ দেগেছিলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ। তিনি বলেছিলেন, আমার ছেলেমেয়ের জন্য আশঙ্কা হয়। তাদের ঘিরে যদি উত্তেজিত জনতা জানতে চায়, তোমরা কোন ধর্মের, তারা কী জবাব দেবে? এমন মন্তব্যের পর থেকেই তাঁর ওপর যথেষ্ট খাপ্পা বিজেপি-সহ একাধিক হিন্দুত্ববাদী দল। তবে তাতে দমে না গিয়ে আবারও মুখ খুললেন এই অভিনেতা। এবার তিনি বললেন, ‘দেশজুড়ে ধর্মের নামে ঘৃণার দেওয়াল তুলে দেওয়া হচ্ছে। যাঁরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছেন, তাঁদেরই শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।’
সম্প্রতি টুইটারে নাসিরুদ্দিনের একটি ২ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের ভিডিও প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সেখানে দেখা যাচ্ছে তিনি উর্দুতে বলছেন, যারা অধিকার চাইছে তাদেরই বন্দী করা হচ্ছে। ধর্মের নামে নিরীহ মানুষকে খুন করা হচ্ছে। সারা দেশ ভয়াবহ ঘৃণা ও হিংসায় ভরে গিয়েছে। কেউ প্রতিবাদ করলেই তার অফিসে হানা দেওয়া হচ্ছে, লাইসেন্স কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেওয়া হচ্ছে। আসলে তাঁরা যাতে সত্যি কথাটা না বলতে পারেন, সেজন্য তাঁদের এইভাবে ভয় পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে।
তবে এখানেই না থেমে প্রবীণ অভিনেতা স্মরণ করিয়ে দেন, ২৬ নভেম্বর, ১৯৪৯ সালে লাগু হয়েছিল দেশের সংবিধান। যার প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল, বাক স্বাধীনতা, ধর্মচারণ ও সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু ইদানীং কালে গোটা দেশজুড়েই ধর্মের নামে ঘৃণার দেওয়াল তুলে দেওয়া হচ্ছে। যাঁরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছেন, তাঁদেরই শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। শিল্পী, পণ্ডিত, অভিনেতা, কবি, সকলেরই কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে।
এরপরেই নাসিরুদ্দিন প্রশ্ন তোলেন, এই ভারতই কি আমরা চেয়েছিলাম? আমরা কি এমন ভারতের স্বপ্ন দেখেছিলাম যেখানে বিরোধিতার কোনও জায়গা থাকবে না? কেবল ধনী ও ক্ষমতাশালীদেরই কথা শোনা হবে। দরিদ্র ও দুর্বলতম শ্রেণির মানুষ শোষিত হবেন? একসময় যেখানে আইনের শাসন ছিল এখন সেখানে রয়েছে শুধুই অন্ধকার।
‘অবকি বার মানব অধিকার’ এই হ্যাশট্যাগে অ্যামনেস্টি দাবি করেছে, ভারতে যাঁরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলছেন, তাঁদের ওপরে ব্যাপক দমনপীড়ন নামিয়ে আনা হয়েছে। তাদের আহ্বান, নতুন বছরে সাংবিধানিক মূল্যবোধের পক্ষে সরব হন। সরকারকে বলুন, এই দমনপীড়ন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
অ্যামনেস্টি ইন্ডিয়ার ভারতীয় শাখার সদস্য আকার প্যাটেল বলেন, এখন ভারতে মানবাধিকার কর্মীরা বিপন্ন। কিন্তু অতীতে প্রত্যেকবার দেখা গিয়েছে, এই ধরনের পরিস্থিতিতে চিরকালই মানবাধিকারের জয় হয়েছে। এবারও তাই হবে। প্রসঙ্গত, বিদেশি লেনদেনে অসঙ্গতি থাকার অভিযোগ তুলে অ্যামনেস্টির ঠিকানায় তল্লাশি চালানো হয়েছিল। এছাড়াও বেশ কয়েকটি বিদেশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করেছে কেন্দ্র।