গোহারা হারছে ধুতি। জিতে যাচ্ছে প্যাণ্ট-পাজামা-চোস্তা।
লোকসভা থেকে প্রায় বিদায় নিতে চলেছেন ধুতি পরিহিত সাংসদেরা। একসময় সংসদে ধুতিরই ছিল রমরমা। ফটফটে সাদা পাটভাঙা ধুতিরই ছিল দাপট। দেখা যেত অটলবিহারি বাজপেয়ী, প্রণব মুখোপাধ্যায়, রঘুবংশ প্রসাদের মতো ধুতি পরিহিত নেতাদের। কিন্তু এখন পুরুষ সাংসদদের পছন্দের পোশাক পাজামা-প্যাণ্ট-চোস্তা। সাংসদের অধিবেশনের দিকে চোখ বোলালে দেখা যাবে সাকুল্যে জনা দশ-বারো সাংসদেরই পরনে ধুতি। বাকিরা পাজামা-পাঞ্জাবি বা শার্ট-প্যান্টেই স্বচ্ছন্দ।
গত ৬৬ বছরে অনেক লড়াই দেখেছে সংসদ ভবন। তাঁর মধ্যে রয়েছে প্যাণ্ট ও পাজামার কাছে ধুতির হেরে যাওয়ার লড়াইও। এখনও যে সাংসদরা ধুতিকে আঁকড়ে রেখেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম রাজনাথ সিং, মল্লিকার্জুন খাড়্গে, সৌগত রায়, শিশির অধিকারী, মুলায়ম সিং যাদব, রাধামোহন সিং, কলরাজ মিশ্র, মনোজ সিনহার মতো সাংসদেরা। ধুতি ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখা এই সাংসদেরাও মনে করেন, আর খুব বেশীদিন নয়। তারপর লোকসভা থেকে কার্যত বিদায়যাত্রা হবে ধুতিরও। কারণ, তরুণ সাংসদদের কাছে ধুতি কার্যত ব্রাত্য। যেমন শিশির অধিকারী মনে করেন, ‘ধুতি পড়লে দেখতে ভালো লাগে, কিন্তু এর ঝামেলা অনেক। বিশেষ করে রক্ষণাবেক্ষণের’। আবার কলরাজ মিশ্রের কথায়, ‘একবার অভ্যাস হয়ে গেলে ধুতির থেকে ভালো পোশাক আর নেই। খাঁটি ভারতীয় পোশাক। পরেও আরাম’। সেই ছাত্রাবস্থা থেকেই ধুতি পরছেন কলরাজ। কখনও প্যান্ট পরেননি। বিদেশে গেলেও ধুতিই পরেন।
এই খাঁটি ভারতীয় পোশাকটি একসময় বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা, মধ্যপ্রদেশ-সহ সারা দেশের মানুষের নিত্যদিনের পোশাক ছিল। এখন বাংলার সাংসদদের মধ্যে কেবল সৌগত রায় এবং শিশির অধিকারীই ধুতি পরেন। বাকিরা কেউ ধুতিতে নেই। যদিও দক্ষিণ ভারতের বিশেষ করে তামিলনাড়ুর সাংসদেরা তাঁদের ঐতিহ্য মেনে লুঙ্গির মতো করে ধুতি পড়েন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিম ভারতের সাংসদেরাই ধুতি ছেড়েছেন। অর্থাৎ যারা সর্বদা ভারতীয় ঐতিহ্য নিয়ে কথা বলেন, সেই বিজেপির সাংসদেরাই ছেড়েছেন ভারতীয় পোশাক ধুতি।
বাজপেয়ীই শেষ প্রধানমন্ত্রী যিনি ধুতি পরতেন। কিন্তু মনমোহন সিং বা নরেন্দ্র মোদীরা চোস্তা-পাঞ্জাবীতেই অভ্যস্ত। তাঁরা ধুতিকে আপন করে নেন নি। অবশ্য প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুও চোস্তা-পাঞ্জাবীতে অভ্যস্ত ছিলেন।
তবে ধুতির এমন হাল হলেও শাড়ি কিন্তু বহাল তবিয়তে রাজত্ব করছে। অধিকাংশ মহিলা সাংসদেরই পরনে থাকে শাড়ি। সোনিয়া গান্ধী, সুমিত্রা মহাজন, স্মৃতি ইরানি, সুষমা স্বরাজেরা শাড়িই পড়েন। কয়েকজন মহিলা সাংসদ সালোয়ার কামিজও পড়েন, তবে সেটা সংখ্যালঘু।
মোদ্দা কথা, প্রিয় পোশাক ধুতির দিন গিয়েছে। দশ-শূণ্য গোলে প্যাণ্ট-চোস্তা হারিয়ে দিয়েছে তাকে।