প্রায় এক দশক আগের ঘটনা। ২০০৯ সালে এসি মিলান ছেড়ে স্পেনের জায়ান্ট ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন রিকার্ডো কাকা। সেই সময়ে ছয় কোটি ৮০ লাখ ইউরোর বিনিময়ে ইতালিয়ান সিরি এ লীগ থেকে তাকে কিনে আনে রিয়াল মাদ্রিদ। যা সেই সময়ের দল বদলের ইতিহাসের বিশ্ব রেকর্ড। কিন্তু দুর্ভাগ্য কাকার। রিয়াল মাদ্রিদে যোাগ দেওয়ার পর থেকেই যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলেন এই ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার।
তাঁর এই বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে পেয়েছেন অনেক কিছু। তাঁর ভাষায়, ব্যালন ডি’অর জেতা সর্বশেষ ‘মানুষ’ তিনি। কারণ মেসি-রোনালদো তো আর মানুষ নন! এমন বিনয়ী মানুষের মনে বড় এক দুঃখ আছে। কাকার ক্যারিয়ারে অন্যতম দুঃসময় হিসেবে দেখা হয় রিয়াল মাদ্রিদে চার বছর সময়কে। কাকা নিজেও বলেছেন, মাদ্রিদের সময়টাই তাঁকে ধ্বংস করে দিয়েছিল! এবার একটু খোলাসা করে বললেন, কেন ধ্বংস হয়েছিল তাঁর ক্যারিয়ার।
মাদ্রিদে থাকতে দুটি বড় সমস্যার মুখোমুখে হয়েছিলেন কাকা। চোট ও কোচ মরিনহো। প্রথমটি যে কোনো খেলোয়াড়ের জীবনেই থাকে। আর ‘মরিনহো’ সমস্যা টা হয়তো বিরল। যদিও অনেক তারকা ফুটবলারের ক্যারিয়ারে পর্তুগিজ কোচ এক দুর্বিষহ নাম। কিছুদিন আগে ইকার ক্যাসিয়াস তো মরিনহোর দিকে ইঙ্গিত করেই বলেছিলেন, ‘এই মানুষটা অবসর নেয় না কেন?’
গত বছর ফুটবলকে বিদায় জানিয়েছেন কাকা। মাদ্রিদ ছাড়ার ছয় মরসুম পর ফেলে আসা সেই সময় নিয়ে মুখ খুলেছেন ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপ জেতা এই তারকা। তখনকার কোচ মরিনহোর দিকে তুলেছেন আঙুল, ‘প্রথম বছরে আমি কোমরের চোটে পড়েছিলাম। অস্ত্রোপচার করে সুস্থ হয়ে ছয় মাস পর ফিরলে কোচ মরিনহোর সমস্যায় পড়ি।’
এসি মিলান থেকে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিয়েছিলেন তারকা। মিলানের নয়নমণি রিয়াল সমর্থকদেরও পছন্দের খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছিলেন। কিন্তু রিয়ালের কোচ মরিনহো কাকাকে বেশি সুযোগ দিতেন না।
‘আমি নিশ্চিত ছিলাম রিয়াল মাদ্রিদ খুব ভাল হবে আমার জন্য। আমি ভাবতাম আমি খুব অধ্যবসায়ী, আমার সাধ্যের মধ্যে সব পেতে সর্বোচ্চ চেষ্টাই করতাম। মাদ্রিদে আমার প্রধান সমস্যা ছিল ইনজুরি, এরপরই কোচ (মরিনহো)। আমি সেখানে তিন বছর ছিলাম, চেষ্টা করেছিলাম মরিনহোকে সন্তুষ্ট করতে যাতে আরও সুযোগ পাই। কিন্তু এটা সম্পূর্ণরূপে তার উপর নির্ভর করত, যা আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল।’
কিছুদিন আগেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে বরখাস্ত হয়েছেন মরিনহো। একে তো মাঠে ইউনাইটেডের পারফরমেন্স ছিল যাচ্ছেতাই। এর সঙ্গে যোগ হয়েছিল খেলোয়াড়দের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের টানাপোড়েন।
গত বছর সব ধরনের ফুটবল থেকেই অবসরের সিদ্ধান্ত নেন রিকার্ডো কাকা। মেজর লীগ সকারে কলম্বাস ক্রিউয়ের বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল কাকার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। এই ম্যাচ দিয়েই দীর্ঘ ১৬ বছরের ফুটবল ক্যারিয়ারের অবসান ঘটান ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার। সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে কাকা জিতেছেন উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ। ২০০৭ সালে ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলারও নির্বাচিত হন ২০০২ সালের ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপ জেতে এই ফুটবলার।