প্রবল রাজনৈতিক তরজা আর উত্তেজনার মধ্যেই আজ, শুক্রবার সকাল ৮ টায় ভোট প্রচারের আনুষ্ঠানিক ইতি ঘটেছে বাংলাদেশে। কার্যত বৃহস্পতিবার রাতেই বড় সভা-সমাবেশ-মিছিল শেষ হয়ে গিয়েছে। তবে কাল শেষবেলাতে যুযুধান শিবিরগুলির ঘর গোছানোর পালা চলছে যখন, ঠিক তখনই আওয়ামি লিগের সঙ্গে সমন্বয় মজবুত করতে ঢাকা-১৭ আসন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করলেন জাতীয় পার্টির প্রধান হুসেন মহম্মদ এরশাদ।
ঠিক ১০ বছর আগে আওয়ামি লিগের সঙ্গে জোট করেছিল এরশাদের জাতীয় পার্টি। পরে বিভিন্ন বিষয়ে মতানৈক্য হয়েছে দু’পক্ষের। বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ-অনুযোগ করছিলেন এরশাদ। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সেই অবস্থান আমূল বদলে শেখ হাসিনাকে পূর্ণ সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দলের প্রার্থীর সমর্থনে ঢাকা-১৭ আসন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করেন বাংলাদেশের এই প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। এমনকি হাসিনাকে নিজের ‘বোন’ বলে সম্বোধন করেন তিনি।
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’-এর মোকাবিলার উদ্দেশ্যে আগামী রবিবারের ভোটগ্রহণ পর্বের আগে এরশাদের দলের সঙ্গে কয়েকটি আসনে মতবিরোধ মিটিয়ে ফেলতে সক্রিয় হয়েছেন আওয়ামি নেতৃত্ব। ঢাকা-১৭ আসনে তারই প্রতিফলন দেখা গিয়েছে। এখানে আওয়ামি লিগের প্রার্থী হয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেতা আকবর হোসেন পাঠান ফারুক।
বর্তমানে অসুস্থ এরশাদ চিকিৎসা করাতে সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন।
বৃহস্পতিবার রাতে তিনি সিঙ্গাপুর থেকে ফেরার পরেই হাসিনার প্রতিনিধিরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন বলে খবর। গতকাল তিনি বলেন, ‘আমার বোন হাসিনার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাতেই এই আসনে লড়াই থেকে সরে দাঁড়িয়ে মহাজোটের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমি এই নির্বাচনে বোন হাসিনাকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করব।’ জানা গেছে, এবার নিজের খাসতালুক রংপুর-৩ আসন থেকেই লড়বেন তিনি।
আরেক প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, নিহত জিয়াউর রহমানের পরিবারের কেউ এবারের ভোটে না দাঁড়ালেও তাঁর দল বিএনপি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। জামাতে ইসলামি, গণফোরাম, খেলাফত মজলিস এবং জাতীয় পার্টি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে’ সামিল হয়েছে বিএনপিও। হাসিনার বাবা তথা বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের সরকারের বিদেশমন্ত্রী কামাল হোসেন এই জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ১০ বছরের আওয়ামি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়ায় সওয়ার হয়ে ভোট বৈতরণী পার করার বিষয়ে আশাবাদী বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা কামাল।
তবে নির্বাচনে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখায় আশাবাদী বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী তথা আওয়ামি লিগ নেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জানিয়েছেন, ‘বিএনপির সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও গা জোয়ারির রাজনীতি কখনও পছন্দ করেননি বাংলাদেশের মানুষ। ভবিষ্যতেও করবে না। তাই ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জনগণ আমাদেরই ভোট দেবেন। আমরাই ফের ক্ষমতায় আসব।’