‘গো’-বৎসল মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে গরুদের অবাধ বিচরণ, এ কথা সকলেরই জানা। কারণ উত্তরপ্রদেশের রাস্তাঘাটে গরু ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্যটা এখন খুবই পরিচিত। তবে সেই যোগীর রাজ্যেই এ কী কান্ড! ফসল বাঁচাতে শেষে কিনা সরকারি প্রাথমিক স্কুল আর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রাস্তার গরুদের বেঁধে রেখেছেন আলিগড়ের কৃষকরা! ঘটনাটি পুলিশের নজরে আসার পরেই মিলল প্রায় ৮০০ গরুর সন্ধান!
বিষয়টা একটু খোলসা করা যাক। ক’দিন আগেই গরুর দেহাংশ উদ্ধার নিয়ে ধুন্ধুমার হয়েছে বুলন্দশহরে। হানাহানির ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে ১ পুলিশ আধিকারিক ও আরও ১ যুবকের। এই নিয়ে চরম সমালোচনার মুখে পড়েছে যোগী সরকার। বিশেষ করে তিনি যখন পুলিশের প্রাণহানির উল্লেখটুকুও না করে গোহত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। এ হেন যোগীর রাজ্যে গোরু যে কী আতঙ্ক তৈরি করেছে, তা প্রকাশ্যে এল আলিগড়ের ঘটনায়।
উত্তরপ্রদেশে গো-হত্যা নিষিদ্ধ। ফলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পোষ্য গরুগুলো যখন কর্মক্ষমতাহীন হয়ে পড়ে, তাদের ঘরে বসিয়ে খাওয়ানোর খরচ বহন করতে না পেরে অনেকেই রাস্তায় ছেড়ে দেয়। এই ধরনের মালিকানাহীন গরুর সংখ্যা উত্তরপ্রদেশে ক্রমেই বাড়ছে। আলিগড়ের গরাই ও তামৌতিয়া গ্রামের ওই চাষিদের দাবি, এই গরুগুলো তাঁদের খেতে ঢুকে ফসল নষ্ট করছে। তাদের ঠেকাতে শীতের রাতে জেগে ক্ষেত পাহারা দিতে হচ্ছে তাঁদের। সেকারণেই একটি সরকারি স্কুল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রায় ৮০০ গোরুকে আটকে রেখেছিলেন তাঁরা।
মথুরা প্রসাদ শর্মা নামে এক চাষির কথায়, ‘ রাস্তার গরুগুলো এ ভাবে জমির ফসল নষ্ট করছে, সে কথা স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। কোনও পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি তাদের তরফে। এ দিকে, রাতপাহারা দিতে দিতে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ছি। তাই গরুগুলোকে আটকে রাখা ছাড়া উপায় ছিল না। বাধ্য হয়েই নিজেদের জমির ফসল বাঁচাতে গ্রামের যত বেওয়ারিশ গবাদিপশু ছিল সেগুলিকে গ্রামেরই একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং সরকারি প্রাথমিক স্কুলে বেঁধে রাখা হয়েছিল।
বিষয়টি নজরে আসতেই পুলিশ গাড়ি পাঠিয়ে বেওয়ারিশ গরুগুলোকে গোশালায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে। তবে গোমাতাদের গাড়িতে চড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ করে জেগে উঠেছিলেন গো রক্ষকরা। তাঁরা রাস্তা আটকে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। অভিযোগ করেন গরুগুলিকে কসাই খানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শেষে জেলা শাসকের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
তবে গরুদের প্রতি অবিচার সইতে পারেন না তিনি। তাই সে দিনই রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো এই গরুগুলোর জন্য গোশালা তৈরির ব্যাপারে তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নিতে আধিকারিকদের নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী। শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর এ ধরনের মালিকানাহীন গোরুদের রাখার জন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে ব্যাপারে রূপরেখা তৈরি করতে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যোগী। জেলা পঞ্চায়েতগুলিকে ৭৫০টি গোশালা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর জন্য ১৬টি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনকে ১০ কোটি টাকা করে দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন যোগী।