‘বাংলাদেশের জনগণের উপর আমার বিপুল আস্থা। মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। জনগনের ভোটেই আমরা নির্বাচিত হব।’ আগামী রবিবার বাংলাদেশের ১১তম সংসদ নির্বাচনের আগে বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকার ধানমন্ডির সুধাসদনে এমনই আত্মপ্রত্যয়ের সুর শোনা গেল হাসিনার গলায়।
নির্বাচন একেবারে দোড়গোড়ায়। হাতে রয়েছে মাত্র তিনটে দিন। ভোটের সেই উত্তেজনার মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেন বড় বেশি নিশ্চিন্ত এবং আত্মবিশ্বাসী! বুধবার তাঁর মুখে দেখা গেল তৃপ্তির হাসি। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই তিনি জানিয়ে দিলেন, তাঁর দল আওয়ামি লিগ ফের জিতছে।
এতটা নিশ্চিত কী ভাবে হচ্ছেন? হাসিনার যুক্তি, ২০১৩-র নির্বাচনে প্রায় ৬০০ স্কুল পোড়ানোর কথা বাংলাদেশের মানুষ ভুলে যায়নি। মুছে যায়নি প্রিসাইডিং অফিসার-সহ অজস্র নাগরিককে হত্যার স্মৃতি। রাস্তা কেটে মানুষের যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর দাবি, সেই সময়ে জনগণই রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। ভোটও দিয়েছিলেন তাঁরা। সেই জনগণ ফের তাঁকেই ভোট দেবেন বলে বিশ্বাস হাসিনার।
একই সঙ্গে হাসিনা মনে করিয়ে দিলেন, নির্বাচনের পরে বাংলাদেশে একের পর এক সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সাধারণ মানুষ সে সব ভোলেননি। আর ভোলেননি বলেই ওই সব ঘটনা যে রাজনৈতিক দল ঘটিয়েছিল, তারা জনসমর্থনহীন হয়ে পড়েছে। আর সেই জোরের জায়গা থেকেই ফের সরকার গঠনের ব্যাপারে আশাবাদী আওয়ামি লিগ।
বাংলাদেশের যুব সম্প্রদায় আওয়ামি লিগ সম্পর্কে খুবই উৎসাহী বলে মনে করেন হাসিনা। তাঁর মতে, বাংলাদেশে মানুষের মন থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসটাই মুছে ফেলা হয়েছিল। এখনকার নতুন প্রজন্মের মধ্যে সত্যকে জানার একটা আগ্রহ রয়েছে। ইন্টারনেটে খুঁজলেই একাত্তরের অনেক তথ্য এখন জানা যায়। ফলে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার বিষয়টি এখন অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। হাসিনার কথায়, ‘এর জেরে আওয়ামি লিগের প্রতি যুব সম্প্রদায়ের মতটাই পাল্টে গিয়েছে।’
নির্বাচন উপলক্ষে হাসিনা দেশের বিভিন্ন জায়গায় সফর করেছেন। সেই সফরে তিনি মানুষের কাছ থেকে ভালই সাড়া পেয়েছেন বলে এ দিন দাবি করেন হাসিনা। তাঁর কথায়, ‘মানুষের মধ্যে সেই ভালবাসাটা দেখতে পেলাম জানেন! তাঁরা অন্তর থেকে চাইছেন, আওয়ামি লিগ আবার ক্ষমতায় আসুক। জনগণ এটা জানেন, আওয়ামি লিগের মাধ্যমেই তাঁদের ভাগ্য পরিবর্তিত হবে।’
আবার বিশ্বজুড়ে চলা সন্ত্রাসবাদের প্রসঙ্গ উঠতেই হাসিনা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, পাকিস্তানপন্থী কোনও জঙ্গি গোষ্ঠী বা আলফা ও আল কায়দার মতো কোনও ভারতবিরোধী সন্ত্রাসবাদীদের বাংলাদেশের কোথাও ঘাঁটি গাড়তে দেওয়া হবে না।
তাঁর কথায়, ‘অতীতেও ভারতবিরোধী কোনও শক্তিকে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে দিইনি। আর আগামীদিনেও দেব না। কারণ, জঙ্গিবাদ শুধুমাত্র কোনও একটি দেশ বা জাতির শত্রু নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পক্ষেই চরম বিপজ্জনক। মনে রাখতে হবে সন্ত্রাসবাদ শুধু মানুষ মারে না, উন্নয়নকাজকে ব্যাহত করে দিয়ে দেশকেও পিছিয়ে দেয়। ভারত-সহ সমস্ত প্রতিবেশী দেশকে সঙ্গে নিয়ে তাই আগামীদিনেও সন্ত্রাস ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে লাগাতার লড়াই চালিয়ে যাব।’