পেরিয়ে গেছে ২ সপ্তাহ। কিন্তু এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি মেঘালয়ের পূর্ব জয়ন্তিয়া পাহাড় এলাকার একটি বেআইনি কয়লা খাদানে আটকে পড়া ১৫ জন শ্রমিককে। গত ১৩ ডিসেম্বর ওই বেআইনি খাদানে ইঁদুরের মতো গর্ত দিয়ে আশপাশের জলাশয়ের মাধ্যমে বন্যার জল ঢুকে পড়ে। সেই প্লাবনের জেরেই খাদানে আটকে পড়ে ওই হতভাগ্য ১৫ শ্রমিক।
জানা গেছে, ওই শ্রমিকদের মধ্যে অধিকাংশই বাঙালি। ওঁদের মধ্যে ৭ জনের বাড়ি পশ্চিম গারো পাহাড় জেলার ফুলবাড়ি থানার হরিপুরে। ৩ জনের বাড়ি প্রত্যন্ত লুমথারি গ্রামে। আর বাকি ৫ আসামের বাসিন্দা। তবে ওঁরা এখন কেমন আছেন, আদৌ বেঁচে আছেন কিনা তা কেউ জানে না।
চলতি বছর জুলাইতে থাইল্যান্ডের একটি গুহাতে আটকে পড়েছিল ১২ জন কিশোর। তাদের উদ্ধারের জন্য ভারতের একটি সংস্থা থেকে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন পাম্প মেশিন নিয়ে আসা হয়েছিল। সেই সংস্থাই খনিতে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধারের জন্য এগিয়ে এসেছে।
পাম্প উৎপাদনকারী সংস্থা কিরলোসকার ব্রাদার্স লিমিটেডের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘মেঘালয়ের খনিতে আটকে পড়া শ্রমিকদের নিয়ে আমরাও বেশ উদ্বেগে রয়েছি এবং আমরা যে কোনও সম্ভাব্য উপায়ে তাঁদের উদ্ধার করতে চাই। আমাদের সংস্থা মেঘালয় সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছে। আমরা সাহায্য করতে প্রস্তুত আছি। আশা রাখছি শ্রমিকদের নিরাপদেই উদ্ধার করা সম্ভব হবে।’
তাঁদের উদ্ধারের জন্য দুটি কম ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প ব্যবহার করে জল বাইরে বের করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে বিশেষ লাভ হয়নি। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ১০০ হর্সপাওয়ার সম্পন্ন পাম্পের অপেক্ষায় ছিলেন কিন্তু মেঘালয় সরকারের কাছে সেই পাম্প নেই বলে জানানো হয়। তবে রাজ্য সরকারের কাছে যদি নাই থাকে, কেন তা জানানো হল না নয়াদিল্লীকে? উত্তর মেলেনি এ প্রশ্নের।
পরিবর্তে মেঘালয় সরকারের সাফাই, একাধিকবার বিভিন্নভাবে উদ্ধারকার্যের চেষ্টা করা হলেও কিছুতেই শ্রমিকদের উদ্ধার সম্ভব হচ্ছে না। কারণ আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধারে ৭০ ফুট নিচে নামা দরকার৷ কিন্তু উদ্ধারবাহিনী ৪০ ফুট অবধি নামতে পেরেছেন৷ জলস্তর না কমলে তার নীচে যেতে পারছে না উদ্ধারবাহিনী৷ ফলে থমকে গিয়েছে উদ্ধারকাজ।
অন্যদিকে, এরই মধ্যে উদ্ধারকারীরা কয়লা খাদানের ভেতর থেকে দুর্গন্ধ পেয়েছে। মনে করা হচ্ছে তা শ্রমিকদের পচা-গলা দেহের গন্ধ। জাতীয় বিপর্যয় বাহিনীর ধারণা, জলের মধ্যে দীর্ঘদিন আটকে থাকার ফলে হয়ত কোনও শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে, এই দুর্গন্ধ সেখান থেকেই আসছে। উদ্ধারকারী দলের প্রধান এসকে শাস্ত্রীর বলেন, ‘আমরা জীবিত বা মৃত কাউকেই এখনও খুঁজে পাইনি। তাই উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা রাজ্য সরকারের সহায়তার জন্য অপেক্ষা করছি।’
মেঘালয়ের ওই শ্রমিকদের অনিশ্চিত ভাগ্য নিয়ে বুধবার প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে টুইট করেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। তাঁর কটাক্ষ, ‘ভেসে যাওয়া কয়লাখনিতে আটক ১৫ শ্রমিক দু’ সপ্তাহ ধরে শ্বাস নিতে পারছেন না, আর প্রধানমন্ত্রী বোগিবিল ব্রিজে ক্যামেরার সামনে পোজ দিয়ে বেড়াচ্ছেন! তাঁর সরকার ওই শ্রমিকদের উদ্ধারের জন্য হাই প্রেশার পাম্পের কোনও ব্যবস্থাই করছে না।’
রাহুলের এমন টুইট ঘিরে ইতিমধ্যেই মাথাচাড়া দিয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক। আসরে নেমে পড়েছে বাকি বিরোধীরাও। তবে এখনও তেমন কোনও হেলদোল নেই সরকারের।