জমি জীবিকা বাস্তুতন্ত্র বাঁচাও কমিটির বিক্ষোভের জেরে আবারও ভাঙর সাবস্টেশনের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ নামখানার প্রশাসনিক বৈঠকে সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে আরও বেশি সংখ্যক কর্মী নিয়োগ ক’রে দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশ দেন তিনি। বিরক্ত মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দেন রাজ্যের উন্নয়নকাজ থমকে দিতে চাইলে, কাউকে রেয়াত করবেন না তিনি।
অনেক বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে মাত্র চার মাস হল কাজ শুরু হয়েছে ভাঙরে। কিন্তু বিক্ষোভের জেরে ফের বন্ধ হয়ে গেছে প্রস্তাবিত পাওয়ার সাবস্টেশন তৈরির কাজ। বৃহস্পতিবার সকালে জমি জীবিকা বাস্তুতন্ত্র বাঁচাও কমিটির তরফে আবারও কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাঁরা পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড(পিজিসিআইএল)-এর সাবস্টেশনের কাজ করতে দেবেন না।
এর আগেও দীর্ঘদিন অচলাবস্থা চলেছে ভাঙরে। ২০১৭ সাল থেকে শুরু হয়ে ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচন পর্যন্ত চলে এই অচলাবস্থা। সেসময়ও আন্দোলন শুরু করেছিল জমি জীবিকা বাস্তুতন্ত্র বাঁচাও কমিটি। বছর দেড়েকের আন্দোলনের জেরে আগেও পাওয়ার গ্রিডের বদলে সাবস্টেশনের কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার পক্ষ। এবং সেই মতো কাজও শুরু হয়েছিল। রাজারহাট-গোকর্ণ-পূর্ণিয়ার দিকে একটি লাইনের কাজ প্রায় হয়ে গিয়েছিল। জিরাট-সুভাষগ্রামের দিকে দ্বিতীয় লাইনের কাজও অনেক দূর এগিয়েছিল। তার মধ্যেই নতুন করে আন্দোলন শুরু হয়। মাঝপথেই থেমে যায় সাবস্টেশনের কাজ।
তারপর ১১ অগস্ট সরকার এবং জমি আন্দোলন কমিটির মধ্যে দীর্ঘ বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে কিছু চুক্তির উপর ভিত্তি করে আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়। সেই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, পাওয়ার গ্রিডের বদলে পাওয়ার সাবস্টেশন তৈরি করা হবে। এর পাশাপাশি এলাকা উন্নয়নের কাজ, কমিটির কর্মীদের উপর থেকে মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রামবাসীদের ক্ষতিপূরণ বাবদ ১২ কোটি টাকা দেওয়ার চুক্তিতে ১৩ অগস্ট থেকে পুনরায় সাবস্টেশনের কাজ শুরু হয়েছিল।
তারপর থেকে সেইমতোই কাজ করছিল প্রশাসন। সাবস্টেশনের পাশাপাশি আরও নানা উন্নয়নমূলক কাজও শুরু হয়েছিল গোটা ভাঙর জুড়ে। তবে জমি জীবিকা বাস্তুতন্ত্র বাঁচাও কমিটির দাবি, দীর্ঘ দিন কেটে গেলেও নাকি চুক্তি মেনে কোনও কাজই হয়নি। যা একেবারেই মিথ্যে। কিন্তু ওই ভুঁয়ো কারণ দেখিয়েই বৃহস্পতিবার কাজ বন্ধ করে দেয় জমি জীবিকা বাস্তুতন্ত্র বাঁচাও কমিটি। এদিন কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন কমিটির সদস্যরা। পুলিশের দাবি, তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল বহিরাগত। এই খবরেই ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, যত কর্মী লাগে লাগুক। তবে কাজ শেষ হোক দ্রুত।