সরকারি ভর্তুকিতেই চলছে রেল! এবার প্রকাশ্যে এল এমনই এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। আচ্ছে দিনে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় ক্ষতির বোঝা বেড়েই চলেছে ভারতীয় রেলের।
জানা গেছে, চলতি আর্থিক বছর এপ্রিল থেকে নভেম্বর, এই ৮ মাসে প্রতি ১০০ টাকা আয় করতে রেলকে খরচ করতে হয়েছে ১১২ টাকা ৯১ পয়সা। এর মানে প্রতি ১০০ টাকা পিছু ক্ষতি প্রায় ১৩ টাকা। ২০১৯-এর মার্চের আগে এই পরিস্থিতি বদলের কোনো সুযোগ নেই।
তবে রেল মন্ত্রক সূত্রে খবর, এপ্রিলের মাঝামাঝি শুরু হয় বিয়ের মরশুম। সেজন্য ১২০ দিনের হিসেব মাথায় রেখে ফেব্রুয়ারি-মার্চ থেকেই শুরু হয়ে যায় আগাম টিকিট বুকিং। সেই সময় আগাম বুকিং বাবদ অনেক টাকা ঘরে আসবে রেলের। এ ছাড়া স্টেশন উন্নয়ন প্রকল্প খাতে এবং বিজ্ঞাপন বাবদ আয় বাড়বে। ফলে ক্ষতির চাপ কিছুটা কমবে।
চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত রেলের আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল ১ লক্ষ ২২ হাজার কোটি টাকা। অথচ এই সময়-পর্বে আয় হয়েছে ১ লক্ষ ১৫ হাজার কোটি। অর্থাৎ ঘাটতি ৭ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। এর ওপর চলতি আর্থিক বছরের বছরের নভেম্বর পর্যন্ত রেলের খরচ হয়েছে ১ লক্ষ ৩ হাজার কোটি টাকা। অথচ বাজেটে ধরা হয়েছিল ৯৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। তার মানে, হিসেবের চেয়ে অনেক বেশি টাকা খরচ করতে হয়েছে রেলকে।
আলাদা ভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রের হিসেব ধরলে, নভেম্বর পর্যন্ত যাত্রীভাড়া খাতে রেলের আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৪ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা। অথচ আয় হয়েছে ৩৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। যার অর্থ ঘাটতি ৬৮৩ কোটি টাকা।
আগের হিসেব ধরলে এখন যাত্রীভাড়া বাবদ আয়ের ঘাটতি পৌঁছেছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকায়। এর জেরেই রতি ১০০ টাকা আয় করতে গিয়ে প্রায় ১১৩ টাকা খরচ করতে হচ্ছে রেলকে। এই টাকা খরচ হচ্ছে পেনশন খাতে বাড়তি দায় মেটাতে ও চলতি খাতে বাড়তি খরচের বোঝা জোগাতে।
এ ছাড়াও রয়েছে রেল বাের্ড ও রেলের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চালানোর খরচ। এ বছরের এপ্রিল থেকে নভেম্বরের মধ্যে এসব কারণে বেড়েছে অপারেটিং রেশিও। এর থেকেই স্পষ্ট রেল পরিচালনায় দক্ষতার অভাব রয়েছে। বাড়তি আয় করতেও তাই ব্যর্থ রেল। ফলে নতুন নতুন লাইন পাতা এবং যাত্রীদের জন্য আরও কোচ তৈরি করার বিষয়টি ঝুলেই রয়েছে। কিন্তু সামগ্রিক পরিকাঠামোর উন্নতির জন্য চলতি আর্থিক বছরে ১ লক্ষ ৪৯ হাজার কোটি টাকা ধার্য করেছে রেল।
এখন প্রশ্ন হল, প্রতি ১০০ টাকায় যখন প্রায় ১৩ টাকা ক্ষতি হচ্ছে এবং সেই ক্ষতির বোঝা ক্রমশ বেড়েই চলেছে, তখন পরিষেবার উন্নতির জন্য ১ লক্ষ ৪৯ হাজার কোটি টাকা আসবে কোথা থেকে? এর জন্যও কি রিজার্ভ ব্যাঙ্কে জমা পুঁজির দিকেই হাত বাড়াবে কেন্দ্র? এর উত্তর নেই রেলের কাছে। মুখে কুলুপ এঁটেছেন দফতরের মন্ত্রী পীযুষ গোয়েলও।