বলিউডের বর্ষীয়ান অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ কয়েকদিন আগেই তাঁর সন্তানদের নিয়ে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘বিষ এখন গোটা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। এখানে যে কোনও সময় ক্ষিপ্ত জনতার হিংসার শিকার হতে পারে আমার নিজের সন্তান-সহ যে কোনও শিশুই। এমনকি তাদের এই প্রশ্নও করা হতে পারে যে, তুমি হিন্দু না মুসলিম?’
এরপর থেকেই বিজেপি-সহ একাধিক হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের কোপের মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁকে। এমন বিপন্ন সময়ে ইন্ডাস্ট্রির দুই সতীর্থকে পাশে পেলেন নাসিরুদ্দিন। তাঁর সমর্থনে এবার মুখ খুললেন আশুতোষ রাণা ও মধুর ভান্ডারকর।
রবিবার সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আশুতোষ বলেন, ‘এই দেশে প্রত্যেকের নিজের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার আছে। সেখানে যদি কেউ নিজের মনের কথা বলে থাকেন, তাহলে তা নিয়ে সমালোচনা শুরু না করে আমাদের উচিত তিনি কী বলতে চাইছেন, সেটা গুরুত্ব দিয়ে শোনা।’
তিনি আরও বলেন, ‘কেউ যদি নিজের মনের কথা বলেন আর সেটা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়, তাতে কি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার কোনও পরিবর্তন হবে?’
কেউ যদি নিজের মনে কথা বলেন আর সেটা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়, তাতে কি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার কোনও পরিবর্তন হবে?’
একই সুরে ভান্ডারকরও বলেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশের সমস্ত নাগরিকের অধিকার রয়েছে নিজের ভাবনাচিন্তা ভাগ করে নেওয়ার। ৫০ বছর বয়সী এই পরিচালকের কথায়, ‘কথা বলার অধিকার সবার আছে। আমরা এক গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক। ভারতে সবার সমান অধিকার, এবং তিনি তাঁর অভিমত ব্যক্ত করেছেন। আমাদের দেশের বিশেষত্ব হলো সবাই নিজের মতামত জানাতে পারেন।’
প্রসঙ্গত, ডিসেম্বরের গোড়ায় উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরে গো-হত্যাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ছড়ালে এক পুলিশ অফিসার নিহত হন। কিন্তু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ কর্মকর্তাদের একটি বৈঠকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন যে কীভাবে গো-হত্যা হলো সেই তদন্তের ওপরে। আর পুলিশ অফিসারের মৃত্যুকে তিনি বলেছিলেন ‘দুর্ঘটনা’। এরপরেই ক্ষুব্ধ নাসিরুদ্দিনের মন্তব্য, ‘এমন পরিস্থিতি দেখে আমার ভয় নয়, রাগ হচ্ছে।’
সম্প্রতি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আয়োজিত ‘কারওয়ান-এ-মুহব্বত’ নামের এক অনুষ্ঠানের অংশ হিসাবে নাসিরুদ্দিন শাহ একটি ভিডিও সাক্ষাতকার দেন। সেই ছোট্ট ইউটিউব ভিডিওতেই নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বিষ সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। যারা আইন নিজেদের হাতে তুলে নিচ্ছে, তারা অবাধে ঘুরছে। আমরা সম্প্রতি দেখেছি, একটি পুলিশ অফিসারের মৃত্যুর চেয়ে একটি গরুর মৃত্যু বেশী গুরুত্বপূর্ণ।’
এর পাশাপাশি তিনি জানান, তিনি মুসলিম হলেও তাঁর স্ত্রী হিন্দু। তবে নিজের সন্তানদের তিনি কখনও ধর্মীয় শিক্ষা দেননি। তাই রাস্তায় যদি কেউ তাঁর সন্তানদের ধর্ম কী জিজ্ঞাসা করেন তাহলে তাঁরা বলতে পারবেন না। তাই এই অবস্থায় সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা হচ্ছে তাঁর। এরপরেই নাসিরুদ্দিনের সমালোচনায় গর্জে ওঠেন দেশের হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি। আজমিরে এক সাহিত্য উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাঁর যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও, বিজেপির যুব জন মোর্চার বিক্ষোভের জেরে আজমির ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হন তিনি।
তবে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নাসিরুদ্দিনের বক্তব্যকে তুলে ধরে ভারতে সংখ্যালঘুদের অবস্থা নিয়ে অভিযোগ করলে, নাসিরুদ্দিন তাঁর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ভারতের কথা না ভেবে নিজের দেশের অবস্থার কথা ভাবুন’। বর্ষীয়ান অভিনেতা জানান, ভারতের ৭০ বছরের গণতন্ত্রকে সম্মান করেন তিনি।