গোটা দেশেই বইছে বিজেপি-বিরোধী হাওয়া। তার ওপর কেন্দ্রের আবারও এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তে আরও মজবুত হয়ে উঠল দেশের বিরোধী ঐক্য। বৃহস্পতিবার রাতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে নির্দেশিকা জারি করা হয় যে, এবার থেকে ব্যক্তিগত কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটেও চলবে সরকারি নজরদারি। এর বিরুদ্ধেই এককাট্টা হয়ে প্রতিবাদে মুখর বিরোধীরা।
গতকাল সকাল থেকেই বিক্ষোভে সামিল হয় একে একে প্রায় সবকটি দলই। তবে সবথেকে বেশি সরব তৃণমূল এবং পাশাপাশি কংগ্রেসও। কেন্দ্রের এমন তুঘলকি সিদ্ধান্ত দেখে ক্ষুব্ধ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ব্যক্তিগত কম্পিউটারে নজরদারি চালানোর মানে ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা। তাঁর প্রশ্ন, সাধারণ মানুষকে কেন এঁর জন্য ফল ভোগ করতে হবে?
কেন্দ্রের ওই নির্দেশিকার তীব্র নিন্দা করে শুক্রবার সকালে একটি টুইটও করেন তিনি। টুইটে লেখেন, ‘আমি জানতে পেরেছি যে গতকাল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ১০ টি কেন্দ্রীয় সংস্থাকে ছাড়পত্র দিয়েছে যাতে তারা যে কোনও কম্পিউটারে উৎপন্ন, প্রেরিত, প্রাপ্ত বা সংরক্ষিত তথ্য পাঠোদ্ধার, আটক ও নজরদারি করতে পারে। এটা যদি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য করা হয়ে থাকে তবে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে যথেষ্ট ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই রয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষকে এর জন্য কেন ফল ভোগ করতে হবে? আপনাদের কী মত?’
তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে গলা মিলিয়েছে কংগ্রেসও। তাদের নিজস্ব টুইটার হ্যান্ডেল থেকে কটাক্ষ করে বলা হয়, সাম্প্রতিক বিধানসভা ভোটগুলিতে বিপর্যয়ের পর বিজেপি এখন তথ্য জোগাড়ে মরিয়া। পরে দলের সভাপতি রাহুল গান্ধীও প্রধানমন্ত্রী মোদির উদ্দেশ্যে মন্তব্য করেন, ‘ভারতকে পুলিশ রাষ্ট্রে পরিণত করে আপনার লাভ হবে না। বরং এটাই প্রমাণ হবে, আপনি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা এক স্বৈরশাসক।’
গতকাল রাজ্যসভাতেও বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক হইচই করেন বিরোধীরা। বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ বলেন, এ এক অঘোষিত জরুরি অবস্থার চূড়ান্ত চেহারা, যেখানে সব ক’টি সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাকে খোলা ছেড়ে দেওয়া হল! সংসদের বাইরেও প্রতিবাদে শামিল হন সমাজবাদী পার্টি, রাষ্ট্রীয় জনতা দল-সহ অন্যান্য বিরোধীরা দলের সাংসদরা। সকলেই ওই প্রতিবাদে একজোট হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল এবং কংগ্রেসের সাংসদদের।
তবে শুধুমাত্র বিরোধী দলগুলিই নয়। তৃণমূল নেত্রীর সুর গাইছেন নেটিজেনরাও। মমতার তোলা প্রশ্নগুলিই গতকাল সারাটাদিন ঘোরাফেরা সোশ্যাল মিডিয়ায়। দেশের অধিকাংশ মানুষের মতেই, এমন নির্দেশিকার ফলে ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের ঘটনা আরও বাড়বে। ভারতীয় নাগরিকদের সঙ্গে অপরাধীর মতো আচরণ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন সকলে।
প্রসঙ্গত, ব্যক্তিগত কম্পিউটারে নজরদারি চালানোর এই নির্দেশিকা জারি হওয়ার আগে পর্যন্ত মোবাইল কল বা ইমেল-এর মাধ্যমে যে ডেটা বা তথ্য এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেত। তার ওপর নজরদারি চালানোর ক্ষমতা ছিল তদন্তকারী সংস্থাগুলির। কিন্তু এবার থেকে মোবাইল কল বা ই-মেলের পাশাপাশি বিভিন্ন কম্পিউটারের তথ্য খতিয়ে দেখার এবং যে কোনও কম্পিউটার বা যন্ত্র বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা পেল ওই সব তদন্তকারী সংস্থাগুলি। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ গোটা দেশই।