ক্ষমতায় এসেই রাজ্যকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর স্বপ্ন, গোটা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাবে ঝাঁ-চকচকে ‘বিশ্ববাংলা’। সেই কারণেই রাজ্যের প্রাণকেন্দ্র কলকাতাকেও ‘ক্লিন সিটি, গ্রিন সিটি’ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছেন তিনি। এবার তাঁর নির্দেশেই মাথার ওপর থেকে তারের জটলা কমিয়ে এবং রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করে ‘ইউটিলিটি টানেল’ তৈরির সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা পুরসভা। যার ফলে তরান্বিত হবে শহরের সৌন্দর্যায়ন।
কারিগরি পরিভাষায় এই ‘ইউটিলিটি টানেল’ হল ফুটপাতের একপাশে মাটির নীচে থাকা এমনই একটি নির্দিষ্ট সুড়ঙ্গ, যা দিয়ে যাবে যাবতীয় কেবললাইন, জলের পাইপ, বিদ্যুতের তার ইত্যাদি। অর্থাৎ যে কোনও সময়, যে কোনও প্রয়োজনে ওই সুড়ঙ্গের অংশটুকু খুঁড়ে মেরামতি করলেই চলবে। আগের মতো আর গোটা রাস্তা খোঁড়ার দরকার হবে না।
আপাতত ‘পাইলট প্রজেক্ট’ হিসেবে এই কাজ হবে হরিশ মুখার্জি রোড, আলিপুর রোড এবং এলগিন রোডে। এই প্রকল্পে সাফল্য এলে আগামীদিনে গোটা শহরেই হবে এই ব্যবস্থা। তবে যেসব বড় রাস্তার ধারে প্রশস্ত ফুটপাত আছে, সেখানেই এই টানেল তৈরির কথা ভাবছে পুরসভা। শহরের অলিগলি বা অপরিসর রাস্তায় মাথার উপর তার, কেবলের জট থাকলে সেগুলি একসঙ্গে ধরে রাখার জন্য ট্রের ভাবনাও রয়েছে পুরসভার।
বৃহস্পতিবার এই কথা জানিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। গতকাল এই বিষয়ে তিনি সিইএসসি এবং কয়েকটি টেলিকম সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পুর-কমিশনার খলিল আহমেদ এবং অন্যান্য পদস্থ পুরকর্তারা সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী চার মাসের মধ্যে কলকাতায় পরিবেশবান্ধব হটমিক্স প্ল্যান্ট তৈরি করতে হবে। ততদিন প্রয়োজনীয় কাজ চালানোর জন্য কলকাতা পুরসভার বর্তমান দু’টি প্ল্যান্ট চালানোর ছাড়পত্র মিলেছে। এই সময়ের মধ্যেই যাতে শহরের সমস্ত ভাঙা রাস্তা মেরামতি হয়ে যায়, তারজন্য এদিন সিইএসসি, টেলিকম সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মেয়র।
তিনি ওইসব সংস্থাকে জানিয়ে দিয়েছেন, রাস্তায় কোথায় কতটা হটমিক্সের কাজ করতে হবে, তা চূড়ান্ত করে ফেলা হবে জানুয়ারি মাসেই। আর ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের শুকনো সময়ে সমস্ত জায়গায় হটমিক্সের প্রলেপ দেওয়া হবে। অন্যদিকে, এখনও যেসব রাস্তা ভাঙা রয়েছে বা পিচ দেওয়ার দরকার, তার কাজ শুরু হয়ে যাবে আজ, শুক্রবার থেকেই।
মেয়রের এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তারা। পুরসভার নিজস্ব দু’টি হটমিক্স প্ল্যান্ট পরিবেশবান্ধব করে গড়ে তোলার জন্য তাদের কাছে পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে হটমিক্স তৈরির সময় দূষণকে কীভাবে শূন্যের কাছাকাছি নামিয়ে আনা যায়, সেই ব্যাপারে পর্ষদের কর্তারা সাহায্য করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
পুরসভার নিজস্ব প্ল্যান্ট দু’টিকে পরিবেশবান্ধব করে গড়ে তোলার পাশাপাশি শহরের বাইরেও নতুন হটমিক্স প্ল্যান্ট বসানোর জায়গা খোঁজা হচ্ছে বলে জানান মেয়র। তিনি বলেন, গত বেশ কয়েকমাস হটমিক্স প্ল্যান্ট বন্ধ থাকায় রাস্তা মেরামতির কাজ বন্ধ ছিল। খুব তাড়াতাড়ি আমরা তা শেষ করতে চাই। তাই বরোগুলি কাজের তালিকা তৈরি করবে জানুয়ারি মাসের মধ্যে।