কোলাঘাটের বাসিন্দা সজল কর(২০)। গত ১৮ ডিসেম্বর বাইক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন দ্বিতীয় বর্ষের এই ছাত্র। এরপরই আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিএমআরআই হাসপাতালে ভর্তি করা হলে এক মুহূর্তও দেরি না করে ভেন্টিলেশনে দিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। প্রথম থেকেই ডাক্তাররা কার্যত জানিয়ে দেন, সজলের বাঁচার সম্ভাবনা নেই। তারপরই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ফলে একেবারেই নিথর হয়ে যান তরতাজা ওই যুবক। ব্রেন ডেথ হয় সজলের।
ডাক্তাররা জবাব দেওয়ার পর সন্তান হারানোর শোক বুকে নিয়েই এক সাহসী সিদ্ধান্ত নিলেন সজলের বাবা-বা। ছেলের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ। ফলে শেষ খবর আসা যে স্রেফ সময়ের অপেক্ষা, তা বুঝে যেতেই সজলের মরণোত্তর অঙ্গদানের আবেদন করলেন তাঁরা। যা হতবাক করে দেয় সিএমআরআই-এর চিকিৎসকদের। এক মুহূর্তের জন্য চিকচিক করে ওঠে তাঁদের চোখও।
১৮ ডিসেম্বর রাতেই মারা যান সজল। আর ১৯ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার সকাল ন’টা নাগাদই সিএমআরআই হাসপাতালে অঙ্গ সংগ্রহের কাজ শুরু করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদল। অস্ত্রোপচারের প্রক্রিয়া চলার সময়ই সি কে বিড়লা হাসপাতালকে খবর দেয় সিএমআরআই। রোটো (রিজিওনাল অরগ্যান অ্যান্ড টিসু ট্রান্সপ্ল্যান্ট অরগ্যানাইজেশন)- এর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে বিড়লার। যার ফলে খুব তাড়াতাড়ি সজলের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের কাজ শুরু হয়।
১৯ ডিসেম্বরই সজলের একটি কিডনির গ্রহীতা সিএমআরআই-তেই পাওয়া যায়। সেখানেই আইসিইউ-তে ভর্তি রোগীর শরীরে সজলের কিডনি প্রতিস্থাপিত হয়। তারপর বেলা ১১টা ৩১ মিনিটে তিনটি গ্রিন করিডরের মাধ্যমে অ্যাপোলো গ্লেনেগেলস হাসপাতালে সজলের অপরএকটি কিডনি, এসএসকেএম হাসপাতালে লিভার এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে হৃদযন্ত্র এসে পৌঁছয়।
সব মিলিয়ে ৫ হাসপাতালে গ্রহীতাদের শরীরে প্রতিস্থাপিত হয় সজলের অঙ্গ। হাসপাতাল সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, প্রতিস্থাপনের পর স্থিতিশীল আছেন সমস্ত গ্রহীতাই। মুর্শিদাবাদের নওদা থানার বাসিন্দা হৃদযন্ত্র গ্রহীতা হবিবুর রহমান (৪০) আপাতত আইটিইউতে ভেন্টিলেশনে আছেন বলে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে।
সন্তান হারানোর শোক নয়, সজলকেই এখন নতুন করে খুঁজে পেয়েছে তাঁর পরিবার। জীবদ্দশায় সর্বদাই মানুষের বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়ানো গুণী ছেলে সজলের মা জানালেন, ‘আমার ছেলে তো এখনও বেঁচেই। কত মানুষের প্রার্থনায় সজল আছে, থাকবে।’