২০১৫ সালের পর থেকে কৃষক আত্মহত্যার কোনও তথ্য প্রকাশ করেনি ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো। তাই মোদী জমানায় কোনও কৃষক আত্মহত্যা করেনি। সংসদে দাঁড়িয়ে এমনই হাস্যকর দাবি করলেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী রাধামোহন সিং। বৃহস্পতিবার কৃষকদের সংকট নিয়ে আলোচনা চলার সময় তিনি জানান গত তিন বছরে দেশে কোনও কৃষক আত্মহত্যার তথ্য সরকারের কাছে নেই। কারণ ২০১৬ থেকে আজ পর্যন্ত কোনও কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা প্রকাশ করেনি ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো।
তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী সংসদে প্রশ্ন তুলেছিলেন, ২০১৬ সাল থেকে দেশে যে কৃষকরা আত্মঘাতী হয়েছেন তাঁদের পরিবারের জন্য কী করেছে কেন্দ্র সরকার। সেই প্রশ্নের প্রেক্ষিতেই কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রীর এই অবাক করা উত্তর। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই সংসদে সরব হয়েছেন বিরোধীরা।
দেশের কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা নথিভুক্ত করে থাকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীন ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো(এনসিআরবি)। তাদের ওয়েবসাইটে ২০১৫র পর আর কোনও কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা উল্লেখ করা নেই। ২০১৬ সালের রিপোর্ট এখনও পর্যন্ত প্রকাশই করে উঠতে পারেনি তারা। যেখানে দেশের জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ কৃষিজীবী সেখানে গত তিন বছরে কোনও কৃষক আত্মহত্যা করেনি এটা কীভাবে সম্ভব।
সূত্রের খবর কৃষক আত্মহত্যার তথ্য সাধারণত রাজ্য সরকারগুলিই এনসিআরবিকে দিয়ে থাকে। যে’কটি রাজ্যে কৃষকদের অবস্থা করুণ তার সবকটিই বিজেপি শাসিত। সদ্য মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থানে সদ্য সরকার বদল হয়েছে। তামিলনাড়ুর সরকার বিজেপির মদতপুষ্ট। মহারাষ্ট্র তো বিজেপি শাসিত। তাই বিরোধীদের দাবি, তথ্য পাঠাতে ওইসব রাজ্যের বিজেপি সরকারের গাফিলতিই এর জন্য দায়ী।
এনসিআরবিতে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা গিয়েছে, ২০১৫ সালে আত্মহত্যা করেন মোট ৮,০০৭ জন কৃষক। সেই সঙ্গে আত্মঘাতী হন ৪,৫৯৫ জন কৃষি শ্রমিক। ২০১৪ সালে মোট ৫,৬৫০ কৃষক ও ৬,৭১০ কৃষি শ্রমিক আত্মঘাতী হন। এবং যে আত্মহত্যার ঘটনাগুলির উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলি বেশিরভাগই আর্থিক প্রতারণার কারণে না হলে বিবাদের জেরে।
অন্যদিকে, ওই রিপোর্ট অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছিল মহারাষ্ট্রের কৃষকরা। সেসময় বিজেপি সরকার ছিল না সেখানে। মোট ৩০৩০ জন কৃষক আত্মঘাতী হয়েছিলেন সেবছরে। অথচ ফড়নবীশ সরকারের আমলেই মহারাষ্ট্রে কৃষক বিক্ষোভ সবচেয়ে বেশি হয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে এই সময়কালের কোনও কৃষক মৃত্যুর খবরই নেই ব্যুরোর কাছে!
সম্প্রতি উত্তর মহারাষ্ট্রের বাগলান তালুকে ৪৪ বছর বয়সি চাষি তাতিয়াভাউ খেরনার তাঁর পেঁয়াজ ক্ষেতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। তাঁর আত্মীয়েরা দাবি করেছিলেন, ৫০০ কুইন্টাল পেঁয়াজ মজুত রেখেও বিক্রি করতে না পারায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তিনি। আবার ওই একই সময়ই আত্মঘাতী হওয়া ৩৩ বছর বয়সি মনোজ ধনদাগের মৃত্যুর পিছনে কারণও এক। মনোজও নিজের ক্ষেতে বসেই বিষ খান। পরে মৃত্যু হয় তাঁর। কিন্তু সেসব খবরও চোখ এড়িয়ে গিয়েছে ব্যুরোর। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে দেশজুড়ে।